বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গ্রেফতারের পর ফের শিরোনামে উঠে এসেছে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের নাম। যাত্রী সেজে প্রমোদতরি থেকে শাহরুখের ছেলে আরিয়ানকে আটক করেছিলেন সমীর ওয়াংখেড়ে। তবে এই প্রথম নয়, আগেও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তদন্ত করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর (এনসিবি) এই কর্মকর্তা। তবে এবারই প্রথম অন্য রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন তিনি।
সমীরের অভিযোগ, তার ওপর নজরদারি করছে মুম্বাই পুলিশ। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই তাকে অনুসরণ করছে মুম্বাইয়ের ওশিয়ারা থানার পুলিশ। এ বিষয়ে অভিযোগও করেছেন তিনি।
এনসিবির এক কর্মকর্তা জানান, ছয় বছর ধরে নিয়মিতই একটি সমাধিস্থলে যান সমীর ওয়াংখেড়ে। সেখানে তাঁর মায়ের মৃতদেহ সৎকার করা হয়েছিল। মূলত মাকে শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি সেখানে যান। সমীর ওয়াংখেড়ের দাবি, সেখানে মুম্বাইয়ের ওশিয়ারা পুলিশ স্টেশনের দুই কর্মী তাঁকে অনুসরণ করেছেন। শুধু তা–ই নয়, সমীর সেখানে কী করেছেন, জানতে সিসিটিভি ফুটেজও দেখা হয়েছে।
৯ মাস আগে এই এনসিবি কর্মকর্তার হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী নবাব মালিকের মেয়ের জামাই সমীর খান। সেবারও মাদক নিয়েই চলে গ্রেপ্তারি। নবাব মালিক নিজেই পরে আরিয়ানের গ্রেপ্তারি বিষয়ে একাধিক অভিযোগ তোলেন। তাঁর অভিযোগ, মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে মুম্বাইয়ে ধরা পড়ার পরও বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নবাব মালিকের দাবি, কর্ডেলিয়াতে যে তল্লাশি হবে, অনেক আগে থেকেই তা পরিকল্পিত। যদিও এনসিবির পক্ষ থেকে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়।
মালিকের অভিযোগের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে বলেন, এনসিবি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বিজেপির সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ নেই। যখন এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তখন রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গ টানা সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন ও অপ্রাসঙ্গিক। মালিক একেবারেই ভুল অভিযোগ করেছেন। এনসিবি ঠিকঠাকই তাদের কাজ করছে।
মালিক গত শনিবার অভিযোগ করেন, এনসিবির মুম্বাই ইউনিট জোনাল ডিরেক্টরের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক অটুট আছে। আমি মনে করি, সমীর ওয়াংখেড়ে ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে কোনো কথাবার্তা হয়েছে।’
মালিক প্রশ্ন তোলেন, প্রমোদতরি থেকে ১১ জনকে আটকের পরে কার নির্দেশে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হলো।
মালিকের অভিযোগের জবাবে এনসিবি বলছে, সেকশন ৬৭ ধারায় সবাইকে আটক করা হয়েছে। তাদের সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষা করা হয়েছে। সবার বিবৃতি রেকর্ড করা হয়েছে। যেহেতু তাদের অভিযুক্ত করার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই ওই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কে এই সমীর?
শাহরুখপুত্রকে বাগে পেতে যাত্রীর ছদ্মবেশে প্রমোদতরীতে উঠেছিলেন এনসিবি কর্মকর্তা সমীর। তার পরই হাতেনাতে ধরে ফেলেন আরিয়ানসহ আরও অনেককে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে মাদক-যোগ থেকে শুরু করে ২০১১ সালে মুম্বাই বিমানবন্দরে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফি আটকে দেওয়া- সব কিছুরই ‘নায়ক’ সমীর।
২০০৮ ব্যাচের আইআরএস অফিসার সমীরের দল গত দু’বছরে মুম্বই বিমানবন্দর থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে।
এই এনসিবি অফিসারের আবার সরাসরি বলিউড যোগ রয়েছে। তার স্ত্রী একজন অভিনেত্রী। বলিউড ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
সমীর বিয়ে করেছেন অজয় দেবগণ অভিনীত ‘গঙ্গাজল’ ছবির শিল্পী ক্রান্তি রেডকরকে। ক্রান্তি মরাঠি চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
২০১৭ সালে বিয়ে হয় তাদের। মুম্বাইয়ে থাকেন দু’জন। একাধিক মরাঠি ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্রান্তি। পাশাপাশি টিভি ধারাবাহিক এবং থিয়েটারেও কাজ করছেন।
ক্রান্তির বড় হওয়া মুম্বাইয়েই। প্রথমে কার্ডিনাল গ্রেসিয়াস হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা তার পর রামনায়ারণ রুইয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
কলেজ পাশ করার পরই উচ্চশিক্ষার পিছনে না ছুটে অভিনয়ে অডিশন দিতে শুরু করেন ক্রান্তি। ২০০০ সালে অঙ্কুশ চৌধুরির বিপরীতে একটি মরাঠি ছবিতে সুযোগ পান তিনি।
প্রথম ছবি থেকে দর্শকেরা তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিলেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই অজয় দেবগণের বলিউড ছবি ‘গঙ্গাজল’-এ সুযোগ পেয়ে যান।
২০১৫ সালে ‘কাকন’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করেন তিনি। পরিচালকের ভূমিকাতেও দর্শকদের মন জিতে নিয়েছিলেন।
সূত্রঃ যুগান্তর