শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের আরো সহায়তা চাইলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ আরো অধিক হারে শান্তিরক্ষী সরবরাহ অব্যাহত রাখবে মর্মে প্রত্যাশার কথা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় মহাসচিব শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা রোহিঙ্গাসংকট ও এর সম্ভাব্য উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের এসব নাগরিকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মহাসচিবকে অবহিত করেন এবং সব রোহিঙ্গার মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করেন। গুতেরেস ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থনের কথা আবারও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন গুতেরেস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সামনের বছরগুলোতে বিশেষ করে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে আরো সাফল্য অর্জন করবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উচ্চ পর্যায়ের পদে এবং বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের বিভিন্ন রাজনৈতিক মিশনে মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) পদে আরো বেশি বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োগের জন্য মহাসচিব গুতেরেসকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। ইউক্রেনসংকটজনিত কারণে ব্যস্ত সময়সূচি থাকা সত্ত্বেও এ বৈঠকের সুযোগ দেওয়ার জন্য মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে নিউ ইয়র্কে সফররত মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের নবনিযুক্ত বিশেষ দূত ড. নোলিন হাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাসংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক দেশগুলোসহ সব অংশীজনে সঙ্গ নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য বিশেষ দূতকে অনুরোধ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাখাইন রাজ্যে এমন একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কভিডের বিস্তার রোধ এবং রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারের কারিকুলাম-ভিত্তিক শিক্ষা প্রদান বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা বিশেষ দূতকে অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য নতুন আবাসন তৈরির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখানে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা জীবিকা নির্বাহের কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, স্বদেশে ফেরার তেমন কোনো আশা নেই দেখে রোহিঙ্গারা ক্রমশ অবৈধ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি মিস হেইজারকে যতটা দ্রুত সম্ভব কক্সবাজার ক্যাম্প ও ভাসনচর পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান। বিশেষ দূত মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাঁর সহানুভূতি ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি তাঁর সর্বোচ্চ অ্যাজেন্ডা এবং যত দ্রুত সম্ভব এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য তিনি আঞ্চলিক দেশগুলো, আন্তর্জাতিক সংস্থা, রোহিঙ্গা নেতা এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষসহ সব অংশীজনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত থাকবেন। উভয় বৈঠকে অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. মো. মনোয়ার হোসেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ