শান্তিতে নোবেল জয়েও শান্তি ফেরেনি ইথিওপিয়ায়

গত বছর শান্তিতে নোবেল জয় করেছিলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী। ১৯৯৮ সালে কঠিন এক সীমান্ত যুদ্ধে ইরিত্রিয়ার সঙ্গে তীব্র শত্রুতা তৈরি হয় ইথিওপিয়ার। সেই শত্রুতার সমাপ্তি টেনে শান্তি চুক্তির প্রচেষ্টার কারণেই মূলত আবিকে নোবেল দেয়া হয়েছিল।

আবির নোবেল জয়ের এক বছরেও ইথিওপিয়ায় অধরা রয়ে গেছে শান্তি। এমনকি যে সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে শান্তি আনার প্রচেষ্টার কারণে নোবেল জয়, সেই শান্তি প্রক্রিয়া থমকে আছে। এ অবস্থায় অনেকগুলো সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন আবি আহমেদ।

কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলছে, প্রকৃত সমস্যা আড়াল করার জন্য এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কয়েক বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংঘাতের মাঝে ২০১৮ সালে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবি।

২০১৯ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের পর কিছুদিন আবি-ম্যানিয়া বা আবিকে নিয়ে মানুষ মেতে থাকলেও মাত্র দুই সপ্তাহ পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আবারও আগের রূপ ধারণ শুরু করে।

গত এক বছর ধরে কর্মীরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন আবির অফিসের পাহাড়ের নিচের একটি অব্যহৃত প্লটকে পার্কে পরিণত করার জন্য। এটি করা হচ্ছে আবির রাজনৈতিক ভিশন ফুটিয়ে তোলার জন্য। এখানে তৈরি করা হবে ৪৮ হেক্টরের ফ্রেন্ডশিপ স্কয়ার। এতে ৭৬টি অ্যারাউকারিয়া গাছ থাকবে।

এর প্রতিটি পার্লামেন্টের আপার হাউজে প্রতিনিধিত্ব করা গ্রুপগুলোর প্রতীক হিসেবে থাকবে। আবি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু নোবেলজয়ের এক বছর পরও তার ঐক্যের বার্তা বিফলে যাচ্ছে কিনা, এমন উদ্বেগ রয়ে গেছে। গ্রিসলি নৃতাত্ত্বিক সহিংসতা এখনও রয়েছে।

বিশেষত আবির জন্মস্থল ওরোমিয়া অঞ্চলে। পুলিশ ও সামরিক বাহিনী প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। অনেক বিরোধী রাজনৈতিক নেতা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে এখনও আটক আছেন।

ফলে আগামী বছরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ইথিওপিয়ার সাবেক স্বৈরশাসনের অতীত সত্যিকারার্থে মুছে যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পগুলো আগের প্রশাসনের নেয়া, নগর পরিকল্পনাবিদদের পাশ কাটিয়ে এগুলো করা হচ্ছে- এমন অভিযোগও উঠছে প্রায়ই।

সবচেয়ে চিন্তার কারণ হচ্ছে ইথিওপিয়ার ওরোমো নেতাদের মধ্যেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আবি নিজেও এক ওরোমি নেতা; কিন্তু এক সময় আবির মিত্র মিডিয়া মোগল ওরোমি নেতা জাওয়ার মোহাম্মেদ অভিযোগ করেছেন সরকার তার ওপর হামলার ফন্দি আঁটছে।

সর্বোপরি ইরিত্রিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার কারণে নোবেল পেয়েছিলেন আবি। সেই শান্তি প্রক্রিয়াও থমকে আছে। ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ারকির সঙ্গে আবির ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু টিগরেই পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট বা টিপিএলএফের কারণে এই সম্পর্ক জটিলতায় পড়েছে।

আবির আগেও ইথিওপিয়ার রাজনীতিতে টিপিএলএফের প্রভাব ছিল। এখন গ্রুপটির নেতারা বলছেন, দেশের সব সমস্যার জন্য আবি তাদের বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। ফলে তারা আবিকে আর বৈধ নেতা মনে করেন না।

 

সূত্রঃ যুগান্তর