শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না কালাইয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:
শহীদ মিনার না থাকার কারনে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকদের অবহেলার কারণে এ উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজও নির্মাণ হয়নি শহীদ মিনার।

উপজেলা পরিষদ থেকে বার বার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। গুরুত্ব দেওয়া হয়নি শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস থেকে শুরু করে এদেশের সকল দিবসের তাৎপর্য, ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

তাইতো ২১ ফেব্রুয়ারীর আগমনে এলাকার উজ্জীবিত যুবক-যুবতী এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে কখনও বিদ্যালয় মাঠে আবার কখনও ফাঁকা জায়গায় কলা গাছ পুঁতে বাঁশ, কাঠ, ও কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে পালন করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মান উজ্জ্বল হওয়ার চাইতে ক্ষুন্ন হওয়া ছাড়া কিছুই চখে পড়ে না এ উপজেলার ১১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এ উপজেলার হাতে গনা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ দিবস পালিত হলেও দিবসের কোন গুরুত্বপূর্ণ দিক বা তাৎপর্য তুলে ধরা হয় না শিক্ষার্থীদের মাঝে। এমন অভিযোগও আছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এমনকি কোন দিবসেরই কর্মসূচী পালণ করা হয় না ওই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলে এ উপজেলায় মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২৫টি। এর মধ্যে ১১৪টিতে নেই শহীদ মিনার। সরকারি ভাবে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি আজও। বরং তা উপেক্ষিত করা হয়েছে। ফলে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না এ উপজেলার ১১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে কালাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রেজাউল করিম জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস অতি গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। বিশেষ করে জাতীয় দিবসগুলোতে শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে। কিন্তু গ্রামঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুরত্ব বেশী হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আসা সম্ভব হয় না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় দিবসগুলো যথাযথ পালন হচ্ছে না বলে আমি মনে করি। এ কারণে দিবসগুলোর প্রকৃত ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তিনি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কোন উদ্যোগের বিনিময়ে হউক শহীদ মিনার স্থাপনের দাবী জানান।

কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ওই দিনগুলোতে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকে। ফলে সকল দিবসই গ্রামঞ্চলে নীরবে পেরিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ওই দিবসগুলোর তাৎপর্য, ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যাচ্ছে। তবে এবার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ডেকে স্বস্ব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনা নির্মাণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। যাতে করে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারীর কর্মসূচী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মিত শহীদ মিনারে পালন করা যায়। যে সকল প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুদানের অজুহাত দেখিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে না, খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/অ