শতকোটি টাকার বেশি স্কিমে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন লাগবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দুর্নীতি ও অপচয় রোধে শতকোটি বা তার বেশি ব্যয়ের স্কিম (ছোট প্রকল্প) গ্রহণে অর্থমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে এখন থেকে। তার আগে সরকারের গঠিত কমিটির মাধ্যমে স্কিমের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করা হবে। এছাড়া স্কিমের আওতায় বরাদ্দের টাকায় গাড়ি কেনা, কোনো ধরনের মেরামত ও সংস্কার কাজ করা যাবে না। তবে স্কিম বাস্তবায়নের সময় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিবহন সেবা নেয়া যাবে। স্কিম গ্রহণের ৫ বছরের মধ্যে তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। সব মন্ত্রণালয়ের জন্য এই নির্দেশনাসহ পরিপত্র জারি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার বলেন, স্কিম বাস্তবায়নে শুধু পরিপত্র জারি করলে হবে না। স্কিম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে মৌলিক কিছু সমস্যা আছে। এগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। পরিপত্র অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা সেটিও নজরদারিতে আনতে হবে। এ ধরনের নির্দেশনায় একটি চাপ সৃষ্টি হবে। কিন্তু স্কিম বাস্তবায়নে যে অদক্ষতা আছে তা শনাক্ত করতে হবে। দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করতে হবে। এ নির্দেশনা ইতিবাচক কিন্তু যথেষ্ট নয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দুর্বলতা আছে। নির্ধারিত সময়ে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণেই এসব হচ্ছে। অর্থ বিভাগের এই নির্দেশনার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি। এই নির্দেশনার পরও মনিটরিং করতে হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, অর্থের সঠিক ও দ্রুত ব্যবহার করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা আগে ছিল না। ফলে অনেক স্কিমই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত না হওয়ায় অনেক স্কিমের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছিল। এসব কারণেই নতুন এ নির্দেশনা। প্রসঙ্গত, স্কিম হচ্ছে প্রকল্পের ছোট পরিসর। কয়েকটি স্কিম মিলেই একটি প্রকল্প হয়।

সূত্র বলছে, সরকার অনুমোদিত স্কিম প্রণয়নে ব্যয়সীমাকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে পরিপত্রে। এতে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যমেয়াদি বাজেট বরাদ্দের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই বাজেট সীমার মধ্যে নতুন স্কিম গ্রহণ করলে ব্যয়ের কোনো সীমা থাকবে না। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের মধ্য মেয়াদি কাঠামোর বাজেট বরাদ্দের মধ্যে ব্যয় করা সম্ভব হলেই কেবল নতুন স্কিম গ্রহণ করতে পারবে। তবে স্কিম এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে ৫ বছরের মধ্যেই পুরো বাস্তবায়ন হয়। এসব স্কিমের টাকায় গাড়ি কেনা যাবে না। তবে বাস্তবায়নকালে প্রয়োজনে ভাড়ায় আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিবহন সেবা গ্রহণ করতে পারবে।

এছাড়া স্কিম বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ করতে হলে তার যৌক্তিকতাসহ প্রত্যেক পরামর্শকের কাজের বিবরণ, মেয়াদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পূর্ণ বিবরণ বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে। যৌক্তিকতা ছাড়া পরামর্শক নিয়োগ দেয়া যাবে না। নতুন স্কিমের আওতায় প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পর বাড়তি জনবলের জন্য প্রেষণে নিয়োগ দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রেষণে আনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজ নিজ মূল বেতনের ৩০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত ভাতা পাবেন।

অর্থমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে নানা ধরনের স্কিম গ্রহণ করে। এসব স্কিম গ্রহণের পর দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনাও ঘটে। অর্থের লুটপাট হয়। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না করায় ব্যয়ও বেড়ে যায়। স্কিম ঘিরে এ অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, শত কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যয়ে স্কিমের মধ্যে নতুন কোনো কার্যক্রম বা উদ্যোগ থাকলে স্কিমের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। স্কিম বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তা, প্রাক্কলিত বরাদ্দ, বছরভিত্তিক ব্যয়ের পরিমাণ প্রকাশ করতে হবে। প্রাক্কলিত ব্যয় বাজার দর অনুযায়ী বা অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তবে ১০০ কোটি টাকার স্কিমের ক্ষেত্রে স্কিম যাচাই-বাছাই কমিটি-দুই এবং ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের স্কিমের ক্ষেত্রে স্কিম কমিটি-এক এর মাধ্যমে যাচাই করতে হবে।

সূত্র বলছে, সরকারের স্কিমের জন্য পৃথক কোনো স্টিয়ারিং কমিটি থাকবে না। মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটিই সব স্কিম মনিটরিং করবে। তবে প্রত্যেক দফতর ও সংস্থা প্রধানের নেতৃত্বে স্কিম বাস্তবায়নকারী কমিটি গঠন হবে। তিনি সবকিছু তদারকি করবেন। এসব স্কিম বাস্তবায়নে তিন কিস্তিতে অর্থ ছাড় হবে। সব ধরনের কেনাকাটা, পণ্য সেবা সরবরাহ ও নির্মাণে বিদ্যমান আর্থিক বিধান মেনে চলতে হবে।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো প্রস্তাবিত স্কিম প্রণয়নের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় কোনো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কিনা, সংশ্লিষ্ট স্কিমের মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি বাজেট বরাদ্দের মধ্যে সংকুলান করা যাবে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া স্কিমের বিভিন্ন অঙ্গ ও অঙ্গভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন, প্রস্তাবিত জনবল ও পরামর্শক প্রয়োজনীয়তা, এর সংখ্যা এবং ক্রয় পরিকল্পনা যৌক্তিক কিনা সেটিও নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়ে