ল্যাম্পি স্কিন রোগ : গবাদি পশু নিয়ে দিশেহারা রাজশাহীর মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী জেলা উপজেলাগুলোতে গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চিকিৎসার অভাব আর জনসচেতনতা না থাকায় প্রতিনিয়ত এই রোগে গরু মারা যাচ্ছে। এতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক ছোট খামারি। এদিকে অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো: আকতার হোসেন বলছেন, মাঠ পর্যায়ে প্রাণিসম্পদের কর্মীরা কাজ করছেন, এলএসডি রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যার হিসেব উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়। ভ্যাকসিন দেওয়া হয় শুধু সুস্থ গরুদের।

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, গরুর শরীর মাথাসহ বিভিন্নস্থানে টিউমারের মত দেখা দেয়। সেগুলো ফেটে গিয়ে ঘাঁয়ের সৃস্টি হয়। সেই ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করে নিম পাতা ও হলুদ বেটে লাগালে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কোনো প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো যাবেনা। নরমাল ঘাঁ আস্তে আস্তে এমনিতেই শুকিয়ে যাবে। এদিকে রাজশাহী সিটি হাট থেকে মাংস ব্যবসায়ীরা অল্প মুল্যে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু ক্রয় করছেন এবং মাংস আকারে অধিক মুনাফায় বাজারে বিক্রি করছেন। এতে করে মানবদেহে চড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগজীবাণু। তবে এ অবস্থায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষক বলছেন, ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত এ রোগের জীবাণু মানবদেহে কোনো ক্ষতি করে না।

আর সঠিক তাপমাত্রায় মাংস সেদ্ধ হলে জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে যেকোনো রোগে আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই গবেষকেরা। মাংস ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান বলেন, ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত ও সিলেট সীমান্ত পাহাড়ী অঞ্চল থেকে ফেলে দেওয়া গরু-মহিষ সিটি হাটে নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। এ সমস্ত আহত এবং রোগাক্রান্ত গরু-মহিষগুলো ক্রয় করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে ৩ মাস পর সুস্থ এবং মোটাতাজা করে বিক্রি করি। এছাড়া যেসকল গবাদি পশু মারা যায় সেগুলো মাটিতে পুতে দেওয়া হয়। হরিয়ান ইউনিয়নের খানপুর চরের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু জাফর ইবনে আলম প্রমিজ বলেন, চরাঞ্চলের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর এই রোগ। কয়েকশো গরু আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। অনেক গরু মারাও গেছে। কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি।

হাসপাতালে আসা ছাড়া কোনো সেবা দিতে প্রাণিসম্পদের কেউ বাড়িতে যায় না। জানা গেছে, বর্ষার শুরুতে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলে। মশা-মাছি ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। ফলে আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা করে মশারির ভেতরে রাখতে হয়। আক্রান্ত গরুর শরীর মাথাসহ বিভিন্নস্থানে টিউমারের মত দেখা দেয়। লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের। ফলে প্রতিদিনই এই রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে গবাদিপশু।

খানপুর চরের খামারিরা বলেন, হাসপাতাল যাওয়া ছাড়া কোনো চিকিৎসা বা পরামর্শ পাওয়া যায় না। প্রাণিসম্পদের কেউ এলাকাগুলোতে আসেন না। আমরা জানিও না এই রোগ সম্পর্কে। কি করলে কীভাবে গরুগুলোকে রোগ থেকে বাঁচানো যেতে পারে।