বৃহস্পতিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

লেবাননে দ্বিতীয় দফায় ডিভাইস বিস্ফোরণে আরও ২০ জন নিহত

Paris
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

লেবাননে পেজার (যোগাযোগের তারহীন যন্ত্র) বিস্ফোরণের পর ফের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওয়াকিটকিসহ যোগাযোগের নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের কারণে এবার অন্তত ২০ জন নিহত ও ৪৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বৈরুতের শহরতলীজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ দ্বারা ব্যবহৃত ওয়াকিটকিগুলোতে গতকাল বুধবার বিস্ফোরণ ঘটেছে। যেসব স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলোকে হেজবুল্লাহ’র শক্তিশালী ঘাঁটি হিসাবে দেখা হয়।

আগের দিন মঙ্গলবার হেজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজারে একযোগে বিস্ফোরণে দুই শিশুসহ ১২ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। ওই বিস্ফোরণে নিহত কয়েকজনের জানাজার সময়ও সেখানে কিছু বিস্ফোরণ ঘটেছে।

মঙ্গলবারের ওই হামলার জন্য হেজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দায়ী করলেও এখন পর্যন্ত লেবাননের বিস্ফোরণ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।

তবে লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু করেছে তার দেশ। ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি পরিদর্শনের সময় এ মন্তব্য করেছেন তিনি।

সেইসাথে, লেবাননে এই বিস্ফোরণে পর নিজেদের উত্তরাঞ্চল তথা লেবানন সীমান্তে পুনরায় সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন মোতায়েন করেছে ইসরায়েল।

লেবাননে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি সকল পক্ষকে “সর্বোচ্চ সংযম” প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, “যোগাযোগের যন্ত্রগুলোকে বিস্ফোরিত করার যুক্তি হলো, একটি বড় সামরিক অভিযানের আগের ‘প্রি-এমপটিভ স্ট্রাইক’।”

‘প্রি-এমপটিভ স্ট্রাইক’ বা আক্রমণ প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, তারা কোনও ক্ষতি করার আগেই তাদের অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলা।

গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে ১১ মাস ধরে চলমান আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধের কারণে সর্বাত্মক সংঘাতের আশঙ্কা ইতোমধ্যেই বাড়ছে।

গতকাল বুধবারের বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষকে “নিরাপদে তাদের বাড়িতে” ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, “ইসরায়েল যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব সূচনা করছে এবং আরো যুদ্ধের উপকরণ ও বাহিনীগুলো সরিয়ে আনার মাধ্যমে যুদ্ধের ভরকেন্দ্র উত্তর দিকে সরে আসছে।”

নিহতদের শেষকৃত্য সম্পাদনের সময়ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে

সম্প্রতি গাজায় নিয়োজিত একটি সেনাবাহিনীর ডিভিশন পুনরায় উত্তরে মোতায়েন করা হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এটি নিশ্চিত করেছে।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থনের কথা বলে থাকে। তারা ইরান দ্বারা সমর্থিত এবং ইসরায়েল ও অনেক পশ্চিমা দেশ দ্বারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ। হেজবুল্লাহ বলে তাকে যে গাজায় যুদ্ধ শেষ হলেই কেবল তারা আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ বন্ধ করবে।

হেজবুল্লাহ’র পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তার একটি ইঙ্গিত আজ বৃহস্পতিবার গোষ্ঠীটির নেতা হাসান নাসরাল্লাহর বক্তব্যের মাঝে আসতে পারে।

সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মিডিয়া অফিস গতকাল বুধবার বিস্ফোরণের দ্বিতীয় দফার পর তাদের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরসহ ১৩ জন যোদ্ধার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে।

তারা আরও জানিয়েছে, দিনভর সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি সেনা ও ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান হাইটসকে লক্ষ্যবস্তু করেছিলো তাদের যোদ্ধারা। তারা ইসরায়েলি আর্টিলারি অবস্থানগুলিতে রকেট ছোড়ে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে বুধবার লেবানন থেকে প্রায় ৩০টি প্রজেক্টাইল (মিসাইল) নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে তাতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়ালেও কেউ আহত হয়নি।

যদিও হেজবুল্লাহর মিডিয়া অফিস থেকে বলা হয়েছে যে ইসরায়েলি বিমান দক্ষিণ লেবাননে তাদের যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

বুধবারের ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হেজবুল্লাহ’র জন্য আরেকটি আঘাত এবং ওই ঘটনা এই ইঙ্গিত দেয় যে লেবাননের সমগ্র যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ইসরায়েল এখন অনুপ্রবেশ করতে পারে।

মঙ্গলবার লেবাননে যা ঘটেছে, তাতে অনেক লেবানিজ এখনও হতবাক ও ক্ষুব্ধ।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, বিস্ফোরণে আট বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং একটি ১১ বছর বয়সী ছেলেসহ ১২ জন নিহত এবং দুই হাজার ৮০০ জন আহত হয়েছে।

বিবিসির একটি দল বুধবার বিকালে দক্ষিণ বৈরুতের শহরতলী দাহিয়ায় নিহত চারজনের জানাজায় ছিল। তখন তারা কাছাকাছি একটি বিস্ফোরণ শুনতে পায়।

এসময় সেখানে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায় এবং জানাজায় সমাবেত মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারপরই দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও বিস্ফোরণের খবর আসতে শুরু করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে যে ছোট একটি বিস্ফোরণের পরে একজন ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন। বিবিসি এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি

লেবানিজ রেড ক্রস বলেছে যে দেশটির রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীর পাশাপাশি দক্ষিণ লেবানন এবং বেকা উপত্যকায় বিস্ফোরণের পর ৩০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে ওয়াকিটকিগুলোকে লক্ষ করে মারাত্মক বিস্ফোরণ হয়েছে। হেজবুল্লাহ’র ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকেও জানিয়েছে যে তাদের সদস্যদের দ্বারা ব্যবহৃত ওয়াকিটকিগুলি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

লেবাননের রাষ্ট্র-চালিত ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, বেকা উপত্যকার চাত শহরে একটি মোবাইল বিক্রির দোকানের ভেতরেও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়েছে।

বিস্ফোরিত ওয়াকিটকিতে ‘আইসিওএম-ভি৮২’ লেখা দেখতে পেয়েছে এনএনএ।

আইসিওএম একটি জাপানভিত্তিক রেডিও যোগাযোগ ও টেলিফোন কোম্পানি। কিন্তু ওই মডেলের ওয়াকিটকিগুলোর উৎপাদন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে যে বিস্ফোরিত ওই ওয়াকিটকিগুলোতে পাঁচ মাস আগে কিনেছিলো হেজবুল্লাহ। শুধু তাই নয়, পেজারগুলোও প্রায় একই সময়ে কেনা হয়েছিলো।

সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স দু’টি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে যুদ্ধকালীন জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসাবে হেজবুল্লাহর হাতে পৌঁছানোর আগে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হাজার হাজার ওয়াকিটকি জব্দ করেছিলো।

আইসিওএম-এর ইউকে শাখার সাথে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলেও তারা সব গণমাধ্যমকে কোম্পানির জাপানের প্রেস অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। সেই অনুযায়ী বিবিসি আইসিওএম জাপানের সাথেও যোগাযোগ করেছে।

মার্কিন ও লেবানন সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস এবং রয়টার্সকে জানিয়েছে যে ইসরায়েল পেজারের ভিতরে অল্প পরিমাণে বিস্ফোরক স্থাপন করেছিলো, যা মঙ্গলবার বিস্ফোরিত হয়েছিল।

বৈরুতের একটি হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন যে তিনি যে আহতদের দেখেছেন তাদের অন্তত ৬০ শতাংশ একটি চোখ হারিয়েছে। বেশিরভাগই একটি হাত হারিয়েছে।

“এটি একজন চিকিৎসক হিসাবে এটাই সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি মনে করি হতাহতের সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির ধরন অনেক বেশি,” ডা. ইলিয়াস ওয়ারাক বলেছেন।

“দুর্ভাগ্যবশত, আমরা অনেক চোখ বাঁচাতে পারিনি। এবং, এটাও দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ক্ষতি শুধু চোখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়- তাদের মধ্যে কারও কারও মুখের ক্ষতি ছাড়াও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়েছে।”

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক