লেনদেনে বেড়েছে মুঠোফোন নির্ভরতা

করোনার কারণে দুই মাসের বেশি ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বন্ধ ছিল দোকানপাট। সরকারের সাধারণ ছুটির কারণে বেশির ভাগ অফিস-আদালতও ছিল বন্ধ। ব্যাংকের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল হাতে গোনা কয়েকটি সেবার মধ্যে। এ অবস্থায় ঘরবন্দী মানুষের কাছে হাতে থাকা মুঠোফোনটিই ছিল লেনদেনের প্রধান মাধ্যম।

একইভাবে বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (এমএফএস) পরিষেবা বিল পরিশোধ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বেড়েছে মোবাইল রিচার্জও। যদিও সারা দেশ অবরুদ্ধ থাকায় সামগ্রিকভাবে এই সেবার লেনদেনের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তবে পোশাকশ্রমিকদের বেতন পরিশোধ, সরকারের প্রণোদনা বিতরণে নতুন করে অনেকে এসব সেবায় যুক্ত হয়েছেন। এতে বেড়েছে গ্রাহকসংখ্যা।

সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও একাধিক ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা থেকে শুরু করে মোবাইল রিচার্জ, টাকা স্থানান্তরসহ নানা প্রয়োজনে অনলাইন নির্ভরতা আগের চেয়ে বেড়েছে মানুষের। ফলে মুঠোফোনই ছিল লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বিকল্প। বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাপস ব্যবহার করে ঘরে বসে ব্যাংকিং সম্পন্ন করেছে মানুষ। তবে মানুষের অনলাইন কেনাকাটা ও লেনদেন ছিল কেবলই প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ কারণে সার্বিকভাবে অনলাইন কেনাকাটা কমে গেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

ব্যাংকগুলো বলছে, স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংকের কার্ডে অনলাইন কেনাকাটার বড় অংশ হয় বিমানের টিকিট ক্রয় ও হোটেল বুকিংয়ে। করোনায় এ দুটোই বন্ধ। ফলে অনলাইনে ব্যাংকের কার্ডে লেনদেনের আর্থিক পরিমাণ কমে গেছে। তবে খাদ্যপণ্য, কাঁচাবাজার ও ওষুধ কেনাকাটায় ব্যাংকের কার্ডের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

বাংলাদেশের কার্ডসেবার শীর্ষে রয়েছে দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি এককভাবে আমেরিকান এক্সপ্রেস সেবা দেয়। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এপ্রিলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল, আড়ং, আগোরা, স্বপ্নের মতো প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল রিচার্জে প্রায় ১২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ই-কমার্স ব্যবসা কমে গেছে। করোনাভাইরাস আসার আগে প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হতো, এখন তা ২০ কোটিতে নেমে এসেছে।

দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার কমে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে কাঁচাবাজারে অনলাইন লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর এপ্রিল ও মে মাসে ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি লেনদেন হয়। একইভাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে অনলাইনে ওষুধ কেনাকাটা বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ এবং মে মাসে ৩ গুণ। টাকার অঙ্কেও তা আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনার মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে। তবে সেটা নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে। এর মধ্যে রয়েছে কাঁচাবাজার, ওষুধ ও খাদ্যপণ্য। তবে অন্যান্য কেনাকাটায় মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না। এ কারণে সব মিলিয়ে লেনদেন খুব আশাপ্রদ হয়নি।

ব্র্যাক ব্যাংক জানায়, অনলাইনে কাঁচাবাজার ও খাদ্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে কার্ডের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার কমে এসেছে। সাধারণ সময়ে কার্ডে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা লেনদেন হলেও এখন তা ৫০ কোটিতে নেমে এসেছে।

তবে করোনা মহামারির কারণে এমএফএস হিসাব খোলা যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ঘরে বসেই মানুষ এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত দুই মাসে বিকাশে প্রায় ৩০ লাখ নতুন হিসাব খোলা হয়েছে। আর নগদ খুলেছে ৩০ লাখের বেশি হিসাব। রকেটে নতুন হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ। এই ৭০ লাখ নতুন হিসাবের মধ্যে প্রায় ২৬ লাখ পোশাকশ্রমিকের।

বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে বিকাশ হিসাবের প্রয়োজন অনেক বেড়েছে। ঘরে বসে টাকা পাঠানো, বিল প্রদান, সরকারি ভাতা গ্রহণ ও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটার চাপ শুরু হয়। ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর এ প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) হিসাবে, তাদের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০। বছরে বিক্রির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার মতো।

 

সুত্রঃ প্রথম আলো