শনিবার , ২৭ জুলাই ২০১৯ | ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

লায়লার মায়াবী বনসাই

Paris
জুলাই ২৭, ২০১৯ ১২:০৩ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। পড়ন্ত বিকেলে বৃষ্টিস্নাত ছোট্ট বাগানটাও মুহূর্তে সজীব হয়ে উঠল। রাজধানীর বেইলি রোডের নাটক সরণির বারান্দা ও উঠানে ঠাঁই পাওয়া দুই শতাধিক বাহারি গাছ এবং ফুলের বনসাই তখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে দর্শকদের। নান্দনিক ল্যান্ডস্কেপিংয়ের সঙ্গে বট, পাকুড়, যজ্ঞডুমুর, হিজল, কাঠমালতি, নিসিন্দা, জারুলের বনসাই দেখে মুগ্ধ উপস্থিত বৃক্ষপ্রেমীরা। এটি শিল্পী লায়লা আহমেদের একক বনসাই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে কেউ তন্ময় হয়ে দেখছিলেন গাছ; কেউবা পছন্দের অশ্বত্থ, পাকুড় কিনে নিচ্ছেন নিজের বাড়ির আঙিনা বা বসার ঘর সাজাতে।

প্রদর্শনীতে কথা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক নুহু আলমের সঙ্গে। নান্দনিক এই শিল্পের প্রতি ভালোলাগা থেকেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছুটে এসেছেন তিনি। সমকালকে নুহু আলম বলেন, ‘বনসাই অবশ্যই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়। আমরা বনে-জঙ্গলে কিংবা রাস্তায় যেসব বড় গাছ দেখি, সেগুলোই ছোট পরিসরে বনসাই রূপে দেখতে পাই। এসব গাছ বসার ঘরে, ছাদে বা যে কোনো ছোট জায়গায় রাখা যায়। ফলে সহজেই ঘর সবুজময় হয়ে ওঠে।’

বনসাই পরিবেশের জন্য কতটা উপযোগী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজধানী থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র বিশ মাইল। অথচ দুই জায়গার পরিবেশই ভিন্ন। কারণ জাবির প্রতিটি বৃক্ষে ‘লাইকন’ পাওয়া যায়। লাইকন হচ্ছে অপুষ্পক আধা সবুজ উদ্ভিদ বিশেষ। শেওলা আর ছত্রাকের মিলিত অবস্থা হচ্ছে লাইকন। পঞ্চাশ বছরে বাড়ে মাত্র ১৮ ইঞ্চি; বাঁচে প্রায় দুইশ’ বছর। এটি জন্মায় সাধারণত গাছের গায়ে। অগ্রগামী উদ্ভিদ হিসেবে এটি পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। এই লাইকনের জন্যই জাবির পরিবেশ অত্যন্ত বিশুদ্ধ। তাই ফুল-ফলসহ বনসাই ঘরে রাখলে পরিবেশ ভালো থাকে। পরিবেশ রক্ষায় বনসাই শিল্পের বিকাশ জরুরি বলে মনে করি আমি।

প্রদর্শনীতে আসা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বলেন, সুন্দর একটা শিল্পকর্ম। এ রকম প্রদর্শনীর সুবাদে নাগরিক জীবনের মানুষ গ্রামীণ পরিবেশ দেখতে পারে; উপলব্ধি করতে পারে। বট, অশ্বত্থ, পাকুড়- এ ধরনের বৃক্ষ আজকাল নতুন প্রজন্ম বা শহুরে শিশুদের কাছে অপরিচিত। তাই বেশি বেশি এ ধরনের প্রদর্শনীর প্রয়োজন।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শিল্পী লায়লা আহমেদ নিজ হাতে যথেষ্ট অর্থ ব্যয়ে ও সময় দিয়ে এই বনসাইগুলো বড় করেছেন। প্রদর্শনী থেকেই উপস্থিত বৃক্ষপ্রেমীরা দু-একটি বৃক্ষ নিয়ে যাচ্ছেন নমুনা হিসেবে ঘর সাজাবেন বলে।

বনসাই লায়লার নেশা :শৈশবে লায়লা আহমেদ নিজ জেলা টাঙ্গাইলের আদালতপাড়ার বাসার ছাদে গড়ে তোলেন বিভিন্ন ফল-ফুলের গাছের বাগান। ১৯৯১ সালে বিয়ে হয়ে গেলে সে নেশায় কিছুটা ছেদ পড়ে। ১৯৯৬ সাল থেকে মালিবাগের ২৭০ নম্বর ‘স্বপ্নীল’ নামের বাড়িটির প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুটের ছাদে আবার শুরু করেন বাগানের কাজ। সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন নিত্যনতুন গাছের সন্ধানে। একদিন শখের বসে ধানমণ্ডিতে ঢুকে পড়েছিলেন শিল্পী নাজমুল হকের বনসাই প্রদর্শনীতে। সেখান থেকে বনসাই শিল্পের প্রতি তার আগ্রহটা শুরু। প্রথমে একটি, পরে আরও দুটি- এভাবে বাড়তে থাকে তার বনসাই সংগ্রহ। এক সময় নিজেই এই শিল্পের চর্চা শুরু করে দিলেন। টানা ২৩ বছর সন্তানের মতো নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করে চলেছেন তিনি। তিনি গড়ে তুলেছেন ‘মায়াবী বনসাই’ নামে একটি সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালায় রয়েছে ২০০ প্রজাতির দুই হাজারেরও বেশি বনসাই। এবারের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে দুই শতাধিক।

লায়লা আহমেদ বলেন, রাজধানীতে যেভাবে দালানকোঠা গড়ে উঠছে, তাতে খোলা জায়গা ও গাছপালা কমে যাচ্ছে। আমরা চাইলেও বড় গাছ লাগাতে পারছি না। অল্প জায়গায় ও ছোট পাত্রে তৈরি করা যায় বলে নানা রকমের বনসাই দিয়ে ঘর বা ছাদে বাগান করতে পারি।

তিনি জানান, বিশ্বে বনসাই শিল্পের প্রায় ২০টি স্টাইল রয়েছে। তিনি এসবের মধ্য থেকে ৭-৮টিকে বেছে নিয়েছেন। নিজ বাড়ির ছাদে সংগ্রহশালাটি গড়ে তুলেছেন। এখানেই তিনি আটজনকে বনসাই শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেন। তিন মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণের মূল্য সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখান থেকে তিনি বনসাই বিক্রিও করেন।

প্রদর্শনীর শেষ দিন আজ :বৃহস্পতিবার শিল্পী লায়লা আহমেদের এ বনসাই প্রদর্শনী শুরু হয়। উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়ূয়া। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বনসাই শিল্পী মহসিন খান ও তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন। আজ শনিবার প্রদর্শনীর শেষ দিন।

সর্বশেষ - লাইফ স্টাইল