লালপুরে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধে ধস, আতঙ্কে এলাকাবাসী

আলাউদ্দিন জালাল, লালপুর:

নাটোরের লালপুরের ঈশ্বরদী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে গেছে। উপজেলার গৌরীপুর আকছেদের বাড়ি, নুরুল্লাপুর জমির উদ্দিনের বাড়ি, পালিদেহা গোপালের বাড়ি, গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকট শফিকুল ইসলাম খান এর বাড়িসহ প্রায় ৬০০ গজ সিসি ব্লক ধসে গেছে। এছাড়াও পিচিংব্লকের মাঝে ছিদ্র হওয়ায় পুরাতন কাজ সংস্কার না করলে বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করেছেন।  এতে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, উপজেলার পালিদেহা, গৌরীপুর, নুরুল্লাপুর, লক্ষীপুর, তিলকপুর পর্যন্ত ২২৬.০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি. ব্লক দিয়ে ৮.৫৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মঙ্গলবার (২৯ জুন ২০২১) সরোজমিন ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা বাঁধ এলাকার কিছু কিছু জায়গা ধ্বসে গেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় কয়েক ব্যাক্তি জানান, নদীর তীরে কিছু মানুষ তীর রক্ষা বাঁধে বাশ, কাঠ, লোহার রড ব্লকে পুতে বাঁধের জিও ব্যাগ ছিদ্র করে ফেলেছে। যার ফলে নতুন করে বাঁধ ধ্বসে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে এলাকাবাসী।

আকসেদ মোড়ে ২০ মিটার এবং নুরুল্লাপুরে নতুন বাঁধ এলাকায় ১৫ মিটার এলাকা জুড়ে তীর রক্ষা ব্লক ধ্বসে গেছে। এই স্থানে প্রায় ৭৩ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে তীরবর্তী মানুষের।

গৌরীপুর দক্ষিণপাড়া (আকছেদ মোড়) এলাকার মসলেম উদ্দিন খাঁন (৬২) জানান, বছর ছয়েক আগে পদ্মার তীরবর্তী ভাঙ্গন রোধে ব্লক বসানো হয়। নদী ভাঙ্গনে আকছেদ মোড়ে ৮০ মিটার এবং নুরুল্লাপুরে নতুন বাঁধ এলাকায় ১৫০ মিটার এলাকা জুড়ে তীর রক্ষা ব্লক ধ্বসে গেছে। এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটান তীরবর্তী মানুষেরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মুদি দোকানদার শওকত আলী (৩৫) বলেন, গৌরীপুর দক্ষিণপাড়া পদ্মা নদীর পাড় ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় আড়াই কিলো মিটারের বেড়িবাঁধ। প্রতিদিন কয়েক’শ ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখানে আসে নদী পাড় এলাকায় ঘুরতে । আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি যে কোন সময় বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জয় জানান, নদীর তীর রক্ষা বাঁধ তৈরির সময় কিছুটা অনিয়ম ছিল। বর্ষাকালে নদীর প্রবল স্রোতে নুরুল্লাপুুর, গৌরীপুুর ও পালিদেহা গ্রামে পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ব্লক কোন কোন স্থানে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে।

ঈশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা জানান, প্রথমে পানির লেয়ার উপরে ছিল। পরে লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় গভীরতা সৃষ্টি হলে বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ে। এদিকে মাছ মারার সময় খোঁচা (কাঠি) পুতার কারণে জিও ব্যাগ ফুটো হয়ে ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে পড়ার কারণেও ধ্বসে যাচ্ছে তীর।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার জানান, বাঁধের ক্ষতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিবেন।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান জানান, বাঁধের কিছু কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভয়াবহ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।