লালপুরে ইউএনও’র আদেশ অমান্য করে খলিষাডাঙ্গা নদীতে ধান চাষ

আলাউদ্দিন, লালপুর প্রতিনিধি:

নাটোরের লালপুর উপজেলার বুকচিরে বয়ে যাওয়া এক সময়কার প্রবাহমান খলিষাডাঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। অনেক দেরিতে হলেও নদ-নদীর দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন মাছ বাঁচাতে এ বছর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ২৩ জানুয়ারী উক্ত নদীতে পানি ছেকে মাছ ধরা ও নদীতে শুকনা মওসুমে ধানসহ চাষাবাদ নিষিদ্ধ করে নোটিশ জারী করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম।
শুধু তাই নয় উক্ত বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন ও সতর্ক করে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু ইউএনও’র এমন আদেশকে অমান্য করে কতিপয় অতি লোভী ব্যক্তি নদীর পানি ছেকে ধান চাষ করেছে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাওড়া, চন্ডিগাছা, বাঁশবাড়িয়া চকনাজিরপুর এলাকায় খলিষাডাঙ্গা নদীতে ধানচাষ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে পানি ছেকে মাছ নিধন করে এক শ্রেণীর অতি লোভী কৃষকরা আরো ব্যাপকভাবে ধান চাষের আয়োজন করছে। এতে করে নদীর দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মাছের স্বাভাবিক প্রজনন হ্রাস পাচ্ছে এবং নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় খলিষাডাঙ্গা নদীতে ধান চাষ হলেও কেশবপুর এলাকা এর ব্যতিক্রম। এ গ্রামের অংশে নদীতে যথেষ্ট পানি রয়েছে, রয়েছে মাছের অবাধ বিচরণ।


এর কারন হিসাবে এলাকাবাসিরা জানায়, গত তিন বছর ধরে এ এলাকায় মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে স্থানীয়রা উদ্যোগী হয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি ছেকে মাছধরা ও ধান চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই এ এলাকায় কেউ নদীতে চাষাবাদ করেনা এবং পানি ছেকে মাছ নিধন করেনা। আর এ কারনে এবার মাছের উৎপাদন বেড়েছে।
কেশবপুর গ্রামের আফজাল হোসেন পান্না জানান, পানি ছেকে মাছ না ধরায় নদীতে এ বছর অন্যান্য মাছের পাশাপাশি বোয়াল ও শোল মাছের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এবার মাছ ধরা উৎসবে অনেক বোয়ল ও শোল ধরা পড়েছে।
এদিকে গত বছর উপজেলার চন্ডিগাছা অংশের নদীকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষনা করেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. আবুল কালাম আজাদ। শুধু তাই নয়, খলিষাডাঙ্গা নদী রক্ষার্থে নদী খননের কাজও করা হয় ওই এলাকায় এবং অন্য এলাকাতেও ওই নদী খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। নদী ও দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প কতিপয় ব্যক্তির ক্ষুদ্র স্বার্থের কারনে বিফলে যেতে বসেছে।
শুধু খলিষাডাঙ্গা নদীই নয় উপজেলার বড়াল নদীরও একই অবস্থা। নদী রক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগনের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করলে নদী রক্ষা পাবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন চৌধুরী সিল্কসিটি নিউজকে জানান, নদীতে বাঁধ দেয়া, পানি ছেকে মাছ নিধন, নদীতে ধান বা ফসল ফলানো এবং মাছের অবাধ বিচরনে বাধা প্রদান করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স/শ