লালপুরের জার্মান ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কর্ম করে খেতে চাই

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধিঃ

মানব জনম বড়ই বিচিত্র। বৈচিত্রতায় এর রীতিনীতি। কারও জন্ম রাজার রাজ প্রাসাদে সোনার চামুচ মুখে নিয়ে আবার পৈত্রিক সুত্রেও যা পায় তা সাত পুরুষ বসে খেলেও ফুরায় না। আবার কারও জন্ম দুঃখীর শীর্ন কুঠিরে বুক ভরা ব্যথা নিয়ে পৈত্রিক সুত্রে পায় উপেনের ন্যায় মরিবার মত ঠাই নিয়ে। প্রিয়ার সমাধীতে তাজ মহল গড়তে, কারনা, সাধ জাগে কিন্তু সাধ্য কোথায় ? তেমনি জার্মান মন্ডলেরও সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নাই। দুই দশক আগে এক ট্রেন থেকে পা পিছলে দুই পা কাটা পড়লে বড় অসহায় হয়ে পড়ে তিনি।

জার্মান মন্ডল (৪৫) লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে নওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত কাসেম মন্ডলের ছেলে। জার্মানের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। পৈতিক সুত্রে পাওয়া দুই কাঠা জমি ছাড়া আর কিছু নেই তার। দীর্ঘ দুই দশক ধরে ভিক্ষা করে সংসার চালান তিনি।

জার্মানের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম জানান, তার স্বামী ১৯৯৯ সালে দিনাজপুরের হিলিতে ধান কাটার কাজে যান ট্রেনে করে। এসময় ট্রেনের মধ্যে ছিনতাই কারীরা কবলে পড়েন তিনি। সে সময় পা পিছলে ট্রেন থেকে পড়ে তার দুই পা বিছিন্ন হয়ে যায়। সেই সময় তার স্বামীর প্রাণ বাচঁলেও জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন তিনি। এছাড়া বড় ছেলের পড়াশোনা অর্থভাবে থেমে যায় ষষ্ঠ শ্রেনীতে এবং ছোট মেয়ে এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, তার পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

জার্মান মন্ডল জানান, একটা সময় পরিশ্রমের টাকায় সংসার চলত তার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখন তাকে দুই পা হারিয়ে তার স্ত্রী সন্তানসহ জীবন সংগ্রামে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হচ্ছে।এখন তার অনেক বয়স হয়ে গেছে রোগে শোকে শারীরিক অবস্থাও ভাল না তাই আয় রোজগার করে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি তার কোন কর্মসংস্থান বা স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করে দিলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে পারিশ্রমিক জীবনে ফিরতে চান তিনি।

এবিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুর রশিদ মাষ্টার জানান, জার্মান একজন পরিশ্রমী কর্মঠ মানুষ ছিলেন। পরিশ্রম করেই জীবন চালাতেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তাকে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে হয়েছে। সমাজের বৃত্তবান ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলো তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে সে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেড়িয়ে পরিশ্রম করে খেতে পারতো।

জার্মান আরো জানান, আমার একটি প্রতিবন্ধী কার্ড আছে, আমি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক কোনো সুযোগ সুবিধা পায়নি। আমার স্ত্রী ও মেয়ে সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাই। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি আমার কোন কর্মসংস্থান বা স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করে দিলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে পারিশ্রমিক কর্ম জীবনে ফিরতে চাই।

স/রি