লবণের কারণে পড়ে যেতে পারে চামড়ার দাম

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে লবণের বাজারে অস্থিরতা চলছে। দুই মাসের ব্যবধানে ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা লবণে দাম বেড়েছে ৪শ’ টাকারও বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে  প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে প্রায় ৮শ’ টাকা। এ কারণে এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাবে। লবণের এই বাড়তি দাম সমন্বয় করতে চামড়ার দাম আরও খানিকটা পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন  বলেন, ‘লবণের দাম বাড়ার কারণে চামড়ার দামে এবার বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ লবণের বাড়তি দাম সমন্বয় করতে কম দামে চামড়া কিনতে হবে। এবার কম দামে চামড়া কেনা গেলেও লবণ স্বল্পতায় তা বেশি পরিমাণে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, লবণের দাম বাড়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ায় প্রয়োজনের তুলনায় কম লবণ দেবেন। এ কারণে চামড়া নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকবে।

 

 

এদিকে লবণের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম ১০ শতাংশ হারে কম নির্ধারণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছর কোরবানির ঈদে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এবার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। গত বছর যেখানে ঢাকার বাইরে ছিল প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা, এবার  সেখানে ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। গত বছর প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ টাকা, এবার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২০ টাকা। গত ঈদে বকরির চামড়া দাম প্রতি বর্গফুট ১৭ টাকা ধরা হলেও এবার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা।

 

বাংলাদেশে পুরো বছরের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি চামড়া আসে কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে। সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। সেখান থেকে আড়ত হয়ে এগুলো কিনে নেন ট্যানারি মালিকরা।

 

জানা গেছে, সাধারণত কোরবানির ঈদ শুরু হওয়ার মাসখানেক আগেই লবণ কেনা শুরু করেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার দাম বেশি থাকায় অনেকেই চাহিদামতো লবণ কিনতে পারেননি।

 

প্রসঙ্গত,  দেশে বছরে পরিশোধিত লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার টন। এই পরিমাণ পরিশোধিত লবণ পেতে ২০ থেকে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত লবণের দরকার হয়।

 

বিসিকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের লবণ মওসুমে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ফলে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫ লাখ টন।

 

তবে লবণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মে মাসে চট্টগ্রামের ঘূর্ণিঝড় রুয়ানুর আঘাতে অন্তত ৫ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ মাঠে নষ্ট হয়েছে। আর সেই ঘাটতির কারণেই লবণের দাম বেড়েছে।

 

চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এক বছরের ব্যবধানে লবণের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এই তথ্যের সত্যতা মেলে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেও। সংস্থাটির হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে পরিশোধিত লবণের দাম বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

 

জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) অপরিশোধিত লবণ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর এক বস্তা অপরিশোধিত লবণের দাম ছিল ৬৫০ টাকা।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, অতীতে এক বস্তা (৮০ কেজি) লবণ ৫৫০ টাকা দিয়ে কেনা যেত। কিন্তু এখন প্রতি বস্তা লবণের পেছনে ১ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আগে একটি মাঝারি আকারের চামড়া সংরক্ষণে লবণ বাবদ খরচ হতো ১০০ টাকা। কিন্তু লবণের দাম বাড়ায় মাঝারি আকারের চামড়ায় এবার ১৮০ টাকারও বেশি খরচ হবে।’

 

এদিকে লবণের সংকট মোকাবেলায় দ্রুততার সঙ্গে দেড় লাখ  টন পরিশোধিত লবণ আমদানির জন্য সরকার অনুমতি দিলেও বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। অথচ কোরবানির বাকি আছে আর মাত্র দুই দিন।
লবণের বাজার স্বাভাবিক করতে দেড় লাখ টনের পর আরও এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে বাজারে লবণের ঘাটতি পূরণ ও কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ আগস্ট ৭৫ হাজার ভোজ্য ও ৭৫ হাজার টন শিল্পে ব্যবহৃত লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। লবণ আমদানির এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে এমন সময় যখন দেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত লবণের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন