লকডাউনে অসহায় অন্তঃসত্ত্বাকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিলেন ট্যাক্সিচালক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ভারতের গুরুগ্রামের ট্যাক্সিচালক সঞ্জয় থাকেন এক কামরার বাড়িতে। ঘরে পাখাও নেই। ভয় ছিল পাড়া-প্রতিবেশীরা কী বলবেন তা নিয়ে। তবু লকডাউনে আটকেপড়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে সাহায্য না করে পারেননি তিনি।

ভারতজুড়ে গত ২৪ মার্চ থেকে চলছে লকডাউন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরে লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বাড়ান। খবর এনডিটিভির।

গত মার্চে আচমকা লকডাউনের ঘোষণার পর বহু মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। কেউ আশ্রয় হারিয়ে ফেলেন। আবার অনেকেই খাবারের জোগাড় করতে না পেরে সমস্যায় পড়েন।

তবু মানবতাকে আশ্রয় করে গোটা দেশ লড়াই শুরু করে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। তেমনই এক মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গুরুগ্রামের ট্যাক্সিচালক সঞ্জয়।

তার ট্যাক্সিরই যাত্রী এক গর্ভবতী নারী লকডাউনের কারণে আটকে পড়লে তাকে ২১ দিনের জন্য নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন সঞ্জয়। পরে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হলে কারফিউ পাস জোগাড় করে তাকে তার বাড়ি জয়পুরে পৌঁছে দেন।

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী জয়পুর থেকে মুজাফফরনগর আসছিলেন। সেই সময়ই হঠাৎ লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি গুরুগ্রামে আটকে যান।

তিনি সঞ্জয়েরই ট্যাক্সির যাত্রী ছিলেন। উপায় না পেয়ে অসহায় ওই নারীকে তিনি সাহায্য করেন।

সঞ্জয় নিজে থাকেন একটি এক কামরার বাড়িতে। ঘরে পাখাও নেই। জয়পুরে এক যাত্রীকে নামিয়ে ফেরার সময় ওই নারী সঞ্জয়কে জানান, তার বড় মেয়ে মজফফরনগরে থাকেন। সঞ্জয় যেন তাদের পৌঁছে দেন। ২৮ বছরের সুহানা সিংহের সঙ্গে ছিল তার ছোট আরেকটি মেয়ে।

আটকেপড়ার পর সঞ্জয় ওই মহিলাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার ভয় ছিল, এলাকায় জল্পনা শুরু হতে পারে ওই নারীকে নিয়ে। কিন্তু তবু বিপদের দিনে ওই অন্তঃসত্ত্বাকে একা ছেড়ে দিতে পারেননি তিনি।

এর পর ২১ দিন সুহানা ও তার মেয়েকে আশ্রয় দেন সঞ্জয়। তাদের খাবার-দাবারের জোগাড় করার পাশাপাশি সুহানাকে হাসপাতালেও নিয়ে যান তিনি। চেষ্টা করতে থাকেন কারফিউ পাস জোগাড়ের।

সঞ্জয় বলেন, কোনো উপায় ছিল না। আমার মনে হয়েছিল একদিনের ব্যাপার। ভেবেছিলাম যা হোক সামলে নেব। কিন্তু জানতাম না লকডাউন এত দীর্ঘ দিন ধরে চলবে।

সুহানা সিংহের মুখে সঞ্জয়ের প্রশংসার শেষ নেই। তিনি বলেন, ওই ট্যাক্সিচালক আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমরা এক ঘরে ভাইবোনের মতো বাস করেছি।

টাকা ফুরিয়ে গেলে সঞ্জয় সরকারি সাহায্য চায়। অবশেষে কারফিউ পাসের ব্যবস্থা হয়। সঞ্জয় আমাকে জয়পুরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর