লংগদু যুবলীগ নেতা নয়নকে কারা হত্যা করেছে সবাই জানে: জেলা প্রশাসক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: লংগদুর যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নকে হত্যা করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় কারা জড়িত তাও সবাই জানে বলে মন্তব্য করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।  শনিবার (৩ জুন) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এ মন্তব্য করেন তিনি।

এদিন সকালে পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। পরে দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

মতবিনিময়ের সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘নয়নকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে।’

এরপর তিনি আঞ্চলিক সংগঠন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস-লারমা) ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নয়নকে কে বা কারা হত্যা করেছে তা সবাই জানে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রত্যেকটি আঞ্চলিক সংগঠন অন্যায় করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে এই তথ্যও রয়েছে, জুম চাষ বা কলা নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে গেলেও ওই সংগঠনগুলোকে পাহাড়িরা চাঁদা দিতে বাধ্য হন। এইসব অন্যায় বন্ধ না করলে খুন-গুমের মতো অন্যায় চলতে থাকবে। চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অন্যায়ই বন্ধ করতে হবে।

মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, ‘চাঁদাবাজির মূলে রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা। অস্ত্রের ভয় দেখিয়েই চাঁদা তোলা হয়।’

তিনি বলেন, ‘নয়নকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। নয়ন হত্যার জের ধরে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যকার বিশ্বাস ও সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। এই বিশ্বাস ও সম্প্রীতি আবার সৃষ্টি হতে সময় লাগবে। পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি আবার নির্মাণ করা যাবে, কিন্তু নষ্ট হওয়া বিশ্বাস-সম্প্রীতি কীভাবে তৈরি হবে!’ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কল্যাণ মিত্র চাকমা বলেন, ‘ভয়ে-আতঙ্কে লোকজন নানান জায়গায় চলে গেছে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এটুকু বলা যায়, যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লোকজন ফিরে আসতে শুরু করেছে। কাল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

লংগদু উপজেলায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিন শতাধিক অজ্ঞাতানামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুলাল হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত ৭ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঙালিরা এই ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে নয়নের লাশ নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরে আসার পথে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় শতাধিক বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও শনিবার দুপুরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।