রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করবেন ঢাবি শিক্ষার্থী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

৬ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও জানান তিনি।

শনিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় তিনি জাগো নিউজকে এসব কথা জানান।

মহিউদ্দিন রনি বলেন, সহজকে প্রশ্ন করবো, টিকিট নিয়ে কেন তারা এমন প্রতারণা করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিচ্ছে এভাবে।

তিনি বলেন, আমার অভিযোগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জনগণের পক্ষে। আমি সুষ্ঠুভাবে প্রতীকী প্রতিবাদ করছি। জনগণকেও বুঝাচ্ছি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করবেন না।

‘এরপরও আমাকে এখানে থাকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। যদিও পরে ক্ষমা চেয়েছে।’

এই শিক্ষার্থী বলেন, এতদিনেও রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আমার দাবির বিষয়ে কোনো সাড়া দেননি। বরং আমার সঙ্গে যারা আন্দোলন করছেন তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কথা বলেছেন স্টেশন ম্যানেজার।

তিনি বলেন, রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার জন্য আমার পরিবার, আমি একটি বড় অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তারপরও আমরা রেলওয়ের কর্মকর্তাদের গোলাপের শুভেচ্ছা জানিয়ে দুর্নীতি রোধের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা রেলের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই। টিকিট নিয়ে অরাজকতা বন্ধ করতে চাই।

তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করি। বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোডও দেওয়া হয়। তবে আমার পিন কোড না দিলেও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়। এরপরও টিকিট পাইনি। পরে কমলাপুর রেলস্টেশনে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয়।

কিন্তু সেসময় ওই কক্ষে তার সামনেই প্রায় দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছিল অভিযোগ করে মহিউদ্দিন বলেন, সেখানে কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার সিট ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন।

মহিউদ্দিনের এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তা ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি বলেন, তিনি কী বুঝে এসব অভিযোগ করেছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়।

এই ঢাবি শিক্ষার্থী জানান, গত ১৪ ও ১৫ জুন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এ বিষয়ে অভিযোগ জানান। কিন্তু সেখান থেকেও কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক আসেনি।

মহিউদ্দিন বলেন, আমার জীবনের বড় অর্জন ধ্বংস হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে। রেলের ক্ষতির অন্যান্য ভুক্তভোগীদেরও আমি খুঁজে বের করতে চাই।

তিনি বলেন, আমার এ অন্দোলনকে অনেকে সরকারবিরোধী বলে উসকানি দিয়ে বন্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি নিজে ছাত্রলীগের কর্মী। কোনটা সরকারবিরোধী সেটা আমি বুঝি। রেলওয়ে তাদের দায় এড়িয়ে যেতে এ অন্দোলনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে। বন্ধ করতে চেষ্টা করছে।

৭ জুলাই থেকে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা-যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ছয়দফা দাবিতে হাতে শিকল বাঁধা অবস্থায় কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করছেন তিনি। পরে তার বন্ধু, সহপাঠীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও অবস্থান নেন। কদিন ধরে সেখানে তারা গান, কবিতা, পথনাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

মহিউদ্দিনের ছয়দফা দাবি

* টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডটককম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

* যথোপযুক্ত পদক্পক্ষে গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

* অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

* যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

* ট্রেনের টিকিট পরীক্ষা ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

* ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে এ পর্যন্ত মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে তার অন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, যুব ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম।

এছাড়াও শুক্রবার (১৫ জুলাই) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল যৌথ বিবৃতিতে রনির ছয়দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানান।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ