রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬৫ লাখ টাকার পণ্য চুরি!

পাবনায় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ভেতরে বারবার চুরির ঘটনা ঘটছে। এবার প্রকল্পের ভেতরে পদ্মার পাশে পানিপথে মালামাল ওঠানামার জন্যে দুটি লেইভার ক্রেন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি হয়ে গেছে।

মেগা প্রকল্প রূপপুর প্রকল্পে বিশেষ কাজের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ১২৬ চাকা বিশিষ্ট ক্রেন থেকে চুরি যাওয়া ক্যাবলের মূল্য প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

চুরির ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর বুধবার রাত ১১টার দিকে ঈশ্বরদী থানায় রূপপুর প্রকল্প থেকে এ চুরির বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাশিয়ান কোম্পানি ‘আছের ডাইরেক্টর অব সিকিউরিটি-ভিএন তুরুটিন’বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।

এদিকে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর ৯ মেট্রিক টন লোহাসহ ওই বছর আরো একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ঈশ্বরদী থানায় দায়ের হওয়া মামলার নথি থেকে জানা গেছে, রূপপুর প্রকল্পের অভ্যন্তরে জাহাজের মালামাল ওঠানো নামানোর নির্ধারিত স্থানে থাকা ওই দুটি লেইভার ক্রেন গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের সময়ে ক্যাবলগুলো রাখা ছিল। কিন্তু গত ৯ জানুয়ারি পুনরায় জাহাজে ওই দুটি লেইভার ক্রেনের যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় ২৬৫ মিটার গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবল আর পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে রূপপুর প্রকল্পের জন্য নির্মিত জেটিতে মালামাল ওঠানামা অনিয়মিত রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্রেন দুটি থেকে ক্যাবলগুলো চুরি হয়েছে। কিন্তু এত বিপুল অঙ্কের টাকার মালামাল চুরি বা খোয়া গেলেও এ বিষয়ে প্রকল্পের অনেকেই মুখ খুলতে চান না।

রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক ড. সৌকত আকবরের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে রিং করেও পাওয়া যায়নি।

তবে রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক (সাইট) আশরাফুল ইসলাম জানান, চুরিটি মোটেও ঠিক হয়নি। এখানে প্রত্যেকটি সাব কন্ট্রাক্টরের নিজস্ব সিকিউরিটি আছে। তা ছাডাও বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। মূল ঠিকাদার রোসাটমেরও কিছু দায়িত্ব আছে।

তিনি আরো জানান, গত সপ্তাহে রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সৌকত আকবর রূপপুর প্রকল্পে এসে সেনাবাহিনীসহ অনেকের সঙ্গে মিটিংও করেছেন। এ সময় সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়। আমরাও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, বুধবার রাত ১১টার পরে রূপপুর প্রকল্প থেকে “আছের’ ডিরেক্টর অফ সিকিউরিটি মামলার জন্য এজাহার জমা দেন। রাতেই মামলাটি গ্রহণ করা হয়।

চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ক্রেনের ক্যাবল চুরির সঙ্গে যারা জডিত তাদের হয়তো নিয়মিত ওখানে যাতায়াত রয়েছে বা মেশিন সম্পর্কে ধারণা আছে। তা না হলে এত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি হলো কীভাবে?

তিনি জানান, মামলাটি তদন্তের জন্য পাকশী ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুক্রবার বিকালে বলেন, চুরির ঘটনার ২০-২৫ দিন পর মামলা হয়েছে। বেশি দেরি করে ফেলেছেন তারা। তারপরও আমরা মাঠে তদন্ত করে দেখছি-কারা চুরির সঙ্গে জড়িত? মাঠে আমাদের লোক কাজ করছে।

এদিকে স্থানীয়দের ধারণা, বিশালাকৃতির ক্রেন দুটি থেকে যান্ত্রিক বিষয় জানাশোনা লোকজনই ক্যাবলগুলো সরিয়ে নিতে পারেন। অনভিজ্ঞ কেউ হয়ত এভাবে ক্যাবল নিয়ে যেতে পারে না। বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার।

এদিকে গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে রুপপুর প্রকল্প থেকে ট্রাকে করে ৯ মেট্রিক টন লোহা পাচারের সময় ৫ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এর আগেও কয়েক দফা এ ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্বয়ং পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রকল্পে এত নিরাপত্তা বলয় থাকা সত্ত্বেও বারবার কেন এই চুরির ঘটনা ঘটছে।

পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছাইফুল ইসলাম বাবু মণ্ডল বলেন, রূপপুর প্রকল্পে অনেক সরকারি সংস্থা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এতবড় চুরি হয় কীভাবে? বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।

 

সূত্রঃ যুগান্তর