নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক ছাত্রীকে চলন্ত অটোরিকশার মধ্যেই যৌন হয়রানি করে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনায় অটোচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বোয়ালয়িা মডলে থানা পুলশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশাটিও জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অটো চালকের নাম শামসু ডলার ওরফে সুমন (৩৫)। তিনি নগরীর ভেড়ীপাড়া এলাকার মৃত আমান উল্লাহ রেন্টুর ছেলে।
আজ মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশানর (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রুয়েটের ছাত্রীর ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ ও প্রত্যক্ষর্দশী সাক্ষীর তথ্যরে ভিত্তিতে জানা যায় অটোটির পিছনে সাদা রঙ দিয়ে বড় করে ‘আল্লাহু আকবার, সাদিয়া, তাওসিক পরিবহণ, নামাজ কায়েম করুন’ লিখা আছে, যার রেজি. নং. রাসিক- খ- ৮২৩, ২০১৮-২০১৯। এ থেকে অটোটিকে শনাক্ত করতে সুবিধা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটিকে শনাক্ত করা হয়।
তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ ও প্রত্যক্ষর্দশী সাক্ষীর প্রদত্ত তথ্যরে ভিত্তিতে প্রাথমকি ভাবে জানা যায়, আসামী মামলার ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।
এদিকে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামীকে ৭ (সাত) দিনের পুলশি হেফাজতে নেয়ার আবদেন জানানো হবে এবং বাকি আসামীদরেকে গ্রেফতারে অভযান চলছে বলেও বিজ্ঞিপ্তিতে জানানো হয়।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী নগরীর বোয়ালিয়া থানায় এজাহার দাখিল করেন। পরে সেটি মামলা আকারে গ্রহণ করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন অটোরিকশা চালকসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার সময় রাজশাহীর নগর ভবন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী রুয়েট’র ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর ওই ছাত্রী নিজেই তার ফেসবুকে ঘটনাটি তুলে ধরেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে তিনি লিখেন, ‘আমার বাসা উপরশহর। বাসা দূর বলে আমি সাধারণত রুয়েট থেকে রেইলগেট পর্যন্ত অটোতে করে আসি। আজকেও প্রতিদিনের মতো অটো নিলাম, সাথে ছিল দুইজন অপরিচিত রুয়েটিয়ান ভাইয়া আর একজন ভদ্রলোক। রুয়েটিয়ান ভাই দুইজন চিশতিয়ার সামনে নেমে গেলেন। ভদ্রা পার হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ অটোওয়ালা অটো থামায় দিলো, সামনে থাকা ভদ্রলোক কে বললো, ” আপনি নেমে যান, আমি নিজস্ব লোক তুলবো”! আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই ভদ্রলোক কে জোরপূর্বক নামিয়ে চারজন গুন্ডা উঠে অটো চালানো শুরু হয়ে গেলো! ভদ্রা থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি নির্জন, ইচ্ছামত সেই চারজন আমাকে স্পর্শ করা শুরু করলো। হাজারবার অটো থামানোর জন্য চিৎকার করার পরও অটোওয়ালা পশুর মত হাসতে থাকলো.. তাকে চলন্ত অটোরিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি লিখেন, নগর ভবনের সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে তারা অটো থেকে ধাক্কা মেরে আমাকে ফেলে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো! যতক্ষণে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি ততক্ষণে অটো বহুদূর…’ তাকে যৌন হয়রানীর কোন বিচার হবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লিখেন, ‘কাহিনীটা শুধু শেয়ার করলাম। এইটা বাংলাদেশ, কোনো বিচারের আশা আমি করছিনা।’ তিনি আরও লিখেন, ‘অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে আমার পোশাক কি ছিলো? সাধারণ বাঙালী নারীর মত সালোয়ার কামিজ।’
ওই ছাত্রী তার ফেসবুকে ঘটনাটি তুলে ধরার পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার পোস্টটি অসংখ্যবার লাইক ও শেয়ার হয়েছে। ওই ঘটনায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
স/অ