রিভার্স সুইপে মুশফিকের আত্মাহুতি! ‘বিরক্ত’ খালেদ মাহমুদ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ডারবানের ঘাসের উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনকে একাই ধসিয়ে দেন প্রোটিয়া বাঁ হাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। তাকে সহায়তা করেন অফ স্পিনার সাইমন হার্মার। দুই স্পিনারের মায়াবী ঘূর্ণিতে বেসামাল হয়ে ডারবানে বড় ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। পোর্ট এলিজাবেথে দুই প্রোটিয়া স্পিনারকে সামলাতে টাইগার ব্যাটাররা অনুশীলনে বাড়তি সময় দেন। ড্রাইভ, হুক, পুল, কাট শটের পাশাপাশি সুইপ খেলেন বেশি বেশি। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও লম্বা ক্যারিয়ারের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমও পিছিয়ে ছিলেন না। দুই স্বাগতিক স্পিনারকে সামলানোর প্রস্তুতি নিতে আগের দিন ঘণ্টা খানেক শুধু সুইপ আর রিভার্স সুইপ অনুশীলন করেছেন। পোর্ট এলিজাবেথে সেই পরীক্ষায় টাইগার সাবেক অধিনায়ক মুশফিক প্রায় উতরেও গিয়েছিলেন! তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ২৫ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। তবে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। স্রোতের বিরুদ্ধে হার্মারের বলে অহেতুক রিভার্স সুইপ খেলে বোল্ড হন। বলটিকে মুশফিক অফ ড্রাইভ কিংবা অনড্রাইভ খেলতে পারতেন। পারতেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গীতে খেলতে। কিন্তু খেলেননি। অথচ আগের বলেই তিনি সুইপ করে হাফসেঞ্চুরি করেন। আগের দিন ওইয়ান মুল্ডার ও ডুয়ান্নে অলিভারের সুইংয়ে নাকাল হয়েছিল। গতকাল হার্মার ও মহারাজের ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে ২১৭ রানে গুটিয়ে যায়।

৫১ রানে মুশফিক যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের রান ২১০। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান কেবল তিনিই ছিলেন। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক ৫ মিনিট আগে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন।

ফলোঅন তখন চোখ রাঙানি দিচ্ছিল। বিরতি একটু পরই। দলের বিপদে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হতো। কোনেভাবেই উইকেট দেবেন না এমন পণ থাকা লাগত। কিন্তু ফিফটিতে পৌঁছার এক বল পরই মুশফিক রিভার্স সুইপ করলেন। বল নিচু হয়ে তার অফস্টাম্পে আঘাত করে। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে এলগার, ভেরানেরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। সত্যিই কি মুশফিক রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হলেন?- তাদের অবয়ব এমনই ছিল।

বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমেও মুশফিকের আউটে ছিল চরম বিরক্ত। দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যান দলের বিপদে এমন শট খেলবেন কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মুশফিকের শট নিয়ে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

‘মুশফিকের ওই শট অবশ্যই প্রত্যাশিত ছিল না। বিরতির আর ৫ মিনিট বাকি ছিল। জানতাম যে, আর ৪৩ রান করলে আমরা ফলো-অন বাঁচাব। ওরকম সময়ে এমন শট…মুশফিক আমাদের অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওর কাছ থেকে অমন শট আমরা কেউ আশা করিনি। ব্যাখ্যা মুশিই দিতে পারবে। সে জানে, ওই পরিস্থিতিতে সে ব্যাট করেছে, কেন করেছে, সে বলতে পারবে। তবে কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘অপ্রত্যাশিত একটা শট। এই সময় এরকম শট খেলবে…সে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান তখন। আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফলো-অন বাঁচানো। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের ফলো-অন করায়নি। তার পরও ভাবমূর্তির জন্য, একটা প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার ফলো-অন এড়ানো। সে জানে তার দায়িত্ব…।’

রিভার্স সুইপে মুশফিক একাধিকবার দলকে ডুবিয়েছেন। আবার অনেক সময় রানও পেয়েছেন। এটি তার প্রিয় শটের একটি। কিন্তু সময়, পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হয় এমন শট। খালেদ মাহমুদ কন্ঠে ছিল একই সুর, ‘ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে আমরা এই শট মেনে নেই। কারণ রানের খেলা, রান করতে হবে। কিন্তু কেন টেস্টে? বিশেষ করে, সে যখন এত কষ্ট করে ফিফটি করেছে। ভালো ব্যাটিং করতে করতে ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাখ্যা মুশিই দিতে পারবে আসলে। তবে অমন শট তার কাছ থেকে ওই সময় প্রত্যাশিত নয়।’

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন