রিজার্ভ-মূল্যস্ফীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার অস্থিরতার কারণে কমপক্ষে ৭ মাসের ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ থাকা দরকার। আর মূল্যস্ফীতি ‘গড় বা মাসিক’ যে কোনো হিসাবে অতীতের তুলনায় এর হার অনেক বেশি। রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির সংকট এখন দৃশ্যমান।

তবে বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। সর্বশেষ কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন। এতে দাম আরও কমে আসবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। তবে লোডশেডিং ছাড়া সরকারের ব্যয় সংকোচনসহ অন্যসব পদক্ষেপ রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু লোডশেডিং মোকাবিলায় উৎপাদনমুখী শিল্প, মাঠের কৃষক ও শহরের বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলোর জেনারেটের জ্বালানি তেলের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এই তেলের ব্যবহারের পরিমাণ লোডশেডিংয়ে সাশ্রয়কৃত তেলের পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে হিতে বিপরীতে চলে যাবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত-এমনটি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এরই মধ্যে ডলারের রিজার্ভ যা আছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রিজার্ভ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, নেই বলেও রিজার্ভ এখন ৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে তিনি স্বীকার করে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির অঞ্চলগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমাদের সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার সেগুলো নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকার আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দুটি সংকট দৃশ্যমান। প্রথম, বৈদেশিক মুদ্রা এবং দ্বিতীয় মূল্যস্ফীতি। মুদ্রার বিনিময় হারের আচরণ দেখলে বোঝা যায় চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি আছে। বাণিজ্য ঘাটতি ২৩ বিলিয়নে ঠেকেছে। মোট ডলারের আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যে যেখানে উদ্ধৃত্ত থাকত এখন আর নেই। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বারো মাসের গড় এবং মাসিক মূল্যস্ফীতির হার যেটিই বলা হোক বাস্তবতা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। অতীতের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবিকায় চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বছরের শুরুতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন করছে। ঘোষিত পদক্ষেপ মানা হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও আমদানি ব্যয় কমাতে এটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দ্বিতীয়, আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। কিন্তু তৃতীয় পদক্ষেপ রির্জাভের ওপর চাপ কমাতে জ্বালানি সাশ্রয় করতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের সুফল ও কুফল অর্থাৎ দুধরনের ফলাফল হতে পারে। কারণ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কতটা হিসাব করে নিয়েছে সরকার এটি জানা নেই। তিনি বলেন, লোডশেডিংকালীন উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা চালু রাখা হয়। সেটি ডিজেল, ফার্নেস ওয়েল চালিত জেনারেটর দিয়ে। এছাড়া শহরের বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জেনারেটর চালু করে দেওয়া হয়। এছাড়া এখন আমন উৎপাদনের মৌসুম। এ বছর বৃষ্টি কম হয়েছে। আমন বৃষ্টিনির্ভর শস্য। বৃষ্টির পানির বিকল্প সেচ দিয়ে পূরণ করছে কৃষক। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ মেশিন চালানো হচ্ছে ডিজেল দিয়ে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, একদিকে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য লোডশেডিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। অপরদিকে লোডশেডিং মোকাবিলায় উৎপাদনমুখী শিল্প, কৃষক ও অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। যদি এমন হয় লোডশেডিংয়ে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল সাশ্রয় হচ্ছে তারচেয়ে বেশি চলে যাচ্ছে লোডশেডিং মোকাবিলায়। সেক্ষেত্রে সরকারের এ সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হবে। ড. জাহিদ হোসেন উদাহরণ দিয়ে বলেন, শ্রীলংকা ডলার সাশ্রয় করতে সার আমদানি বন্ধ করে চারশ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছিল। কিন্তু এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সাড়ে চারশ কোটি ডলারের চাল আমদানি করতে হয়। লোডশেডিংয়ের বিষয়টি যেন সেরকম না হয়।

রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের মজুতে চাপ বাড়ছে। তবে সরকার এই পরিস্থিতিকে এখনও আশঙ্কাজনক মনে করছে না। যদিও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিদ্যুতের লোডশেডিং করাসহ সাশ্রয়ী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে জ্বলানি আমদানির খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট স্বল্পমেয়াদি নয়। এ সংকট মধ্যমেয়াদি হবে-এমনটি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

রিজার্ভে চাপ বাড়ছে : বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গড়ে প্রতিমাসে আমদানি ব্যয় হচ্ছে ৭৫০ কোটি ডলারের বেশি। ওই হিসাবে আগামী ৭ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন ৫ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান রিজার্ভ আছে ৩ হাজার ৯৭০ কোটি ডলারের উপরে। তা দিয়ে ৭ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এক বছর আগেই অর্থাৎ গত বছরের জুলাইয়ে সব রেকর্ড ভেঙে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ হয়েছিল। আন্তর্জাতিক নিরাপদ মান অনুযায়ী স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। যদি খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয় তাহলে থাকতে হবে কমপক্ষে ৫ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। বিশ্বব্যাপী অপরিহার্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা থাকলে কমপক্ষে ৭ মাসের সমান আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকতে হয়।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারে ডলার সংকট প্রকট। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়েই এখন রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো নিয়মিত এলসি খুলতেও পারছে না। এই অবস্থায় রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। রপ্তানি আয় বাড়ানো এখন চ্যালেঞ্জিং। কেননা রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা এখন মন্দায় আক্রান্ত। ফলে ওইসব দেশে রপ্তানি কমে যাবে। এদিকে আমদানি বেড়েই যাচ্ছে। এটি কমানো কঠিন। বেশি কমানো হলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নানা পদক্ষেপ আমদানিতে : এরই মধ্যে বিলাসী পণ্য আমদানিতে সরকার নিরুৎসাহিত করেছে। তবে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতেও সমস্যা পড়ছেন আমদানিকারকরা। এমনকি বেসরকারি খাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি এবং সরকারিভাবে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানিতেও অনেক ব্যাংক ঋণপত্র বা এলসি খুলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

রপ্তানি আয় নিয়ে শঙ্কা : এ বছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭শ কোটি মার্কিন ডলারের। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বছর শেষে রপ্তানি আয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

রপ্তানি আয় অর্জন না হলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাবে। চাপ সৃষ্টি হবে রিজার্ভের ওপর। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা করছে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা অর্জন সম্ভব। আর রপ্তানি আয় ঠিক থাকলে রিজার্ভের ওপর চাপও কমে আসবে। যদিও সদ্যবিদায়ি অর্থবছরে রপ্তানি আয় অর্জন হয় ৫ হাজার ২০৮ কোটি মার্কিন ডলারের।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির আশা : প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স নিম্নমুখী ধারায় শেষ হয়েছে সদ্যবিদায়ি অর্থবছর (২০২১-২২)। এই অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। এ বছর ২ হাজার ৪১৮ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসবে এমনটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, হুন্ডির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া, প্রণোদনা বাড়ানো, বিনিময় হারে বাড়তি দাম পাওয়া ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করায় এ খাতে প্রবাহ বাড়বে।

বিশ্ববাজারে কমছে দ্রব্যমূল্য : কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন। এই চুক্তির ফলে রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবরোধ শিথিল করবে, যাতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে খাদ্য রপ্তানি হতে পারে। জানা গেছে, রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকা প্রায় বিশ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য আটকা পড়েছে ইউক্রেনে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি বছরের ফসল তোলার পর এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৫ মিলিয়ন টন। দেশটি বছরে প্রায় ৮৬ মিলিয়ন টনের মতো খাদ্যশস্য উৎপাদন করে যার ৩০ ভাগ তোলাই হয় না বলে জানিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লরা ওয়েলেসলি। এই খাদ্যশস্য বিশ্ববাজারে সরবরাহের ফলে মূল্য কমবে এমনটি ধারণা করছে আমদানিকারক দেশগুলো। এদিকে বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমছে। দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে সয়াবিনের দাম কমেছে ৩২ শতাংশ আর পাম তেলের দাম কমেছে ৪৮ শতাংশ। বিশ্ববাজারের প্রভাবে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে খোলা তেলের দাম এখনো সেভাবে কমেনি। এর হ্রাসকৃত মূল্যে দেশের বাজারে প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন মালিক সমিতি। এটি বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে আগের মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে।

জ্বালানি ও বিদ্যুতে প্রভাব : রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিসহ সামগ্রিকভাবে ব্যয় কমানোর জন্য সরকার সাশ্রয়ী যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে এর প্রভাব পড়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দামের কারণে ডিজেলসহ জ্বালানি তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি কমিয়ে আনা হয়েছে। গ্যাস এবং ডিজেলভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে সারা দেশে লোডশেডিং করা হচ্ছে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বাড়লেও জ্বালানি তেলের অভাবে এখন উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির উন্নতি আগামী শীতের আগে হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী মাঝারি মেয়াদের জ্বালানি সংকট রয়েছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে অনেকদিন। বাংলাদেশ অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল এবং এলএনজি জ্বালানি আমদানিতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। সরকার ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং দ্বিপাক্ষিক উৎস যেমন-সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার থেকে ঋণ নিতে পারে এমনটি পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় শুধু আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভর করা কঠিন হবে। অভ্যন্তরীণ শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। অবিলম্বে পুরোনো গ্যাস অনুসন্ধান সাইটগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যবস্থা প্রয়োজন। সরকারকে উপলব্ধি করা উচিত যে, নবায়নযোগ্য শক্তি বর্তমান জীবাশ্ম-জ্বালানি ভিত্তিক শক্তি সংকটে শক্তি বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সরকারের যত পদক্ষেপ : বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ির জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দের ২৫ শতাংশ কম ব্যয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে চলতি বাজেটে ৬ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ৫০ প্রকল্পে (সি-ক্যাটাগরি) অর্থ ছাড় স্থগিত, বি-ক্যাটাগরির প্রায় ৫০০ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ অর্থ ছাড় স্থগিত এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় সব ধরনের মোটরযান ও জলযান কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, অ্যাপায়ন ও ভ্রমণ ব্যয়সহ মনিহারি, কম্পিউটার-আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাত্র কেনাকাটায় ৫০ শতাংশ বন্ধ করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানি ব্যয়ও পুরোপুরি স্থগিত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

 

সুত্রঃ যুগান্তর