রায়ের অনুলিপির জন্য দাফন হচ্ছে না চার বছরের লাশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চার বছরের অধিক সময় ধরে মর্গে থাকা নীলফামারীর ধর্মান্তরিত হওয়া হোসনে আরার (নিপা রানী) মরদেহ ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় এখনো নীলফামারী পৌঁছায়নি। রায়ের কপি না পাওয়ায় লাশ দাফনে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না নীলফামারীর জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ বিষয়ে নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা হাকিম খন্দকার মো. নাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখনো আদেশ পাইনি। আদালতের আদেশ পেলেই লাশ দাফনে পদক্ষেপ নেব।’

তবে হোসনে আরার (নিপা রানী) শ্বশুর জহুরুল মেম্বার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের জানানো হয়েছে, হাইকোর্টের আদেশের মূল অনুলিপি পাওয়ার পর তাঁরা লাশ দাফনে পদক্ষেপ নেবেন।’

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল আইনি জটিলতায় চার বছরের অধিক সময় ধরে মর্গে পড়ে থাকা নীলফামারীর ধর্মান্তরিত হওয়া হোসনে আরার (নিপা রানী) মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

রায় প্রদানকারী বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরের পর সোমবার ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে দুদিনের মধ্যে হোসনে আরা লাইজুর (নিপা রানী) মরদেহ দাফন করতে বলা হয়।

গত ১২ এপ্রিল হোসনে আরার (নিপা রানী) মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে মরদেহ দাফন করতে বলা হয়। নীলফামারীর জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। দাফনের আগে হোসনে আরার (নিপা রানী) লাশ তাঁর বাবার পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে মেয়ের বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সমীর মজুমদার। ছেলের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আইনি দ্বন্দ্বে চার বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে তাঁর মরদেহ। এত দিনেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ থেকে নিপার মরদেহটি হাসপাতালের মর্গেই পড়ে আছে। ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে মরদেহ নিয়ে এমন আইনি লড়ায়ে জড়িয়ে পড়ে ছেলে ও মেয়ের পরিবার। মামলাটি বিচারিক আদালত ঘুরে দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে আসে।

রংপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারেনি।

ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন নিপা-লাইজু। এভাবেই কাটছিল লাইজু ও নিপা রানী ওরফে হোসনে আরার দিন। কিন্তু বাদ সাধে নিপার পরিবার। নিপা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় লাইজুর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে তার পরিবার। এ মামলায় লাইজুকে নেওয়া হয় কারাগারে। নিপাকে রাখা হয় নিরাপত্তা হেফাজতে। পরে নিপাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয় তার পরিবার। লাইজুও জেল খেটে বের হন। কিছুদিন পর লাইজু বিষ খেয়ে মারা যান। নিপাও শোকে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। এরপর নিপার মরদেহ দাবি করে আদালতে মামলা করে দুপক্ষই। এ মামলাটি নিম্ন আদালত ঘুরে উচ্চ আদালতে আসে। অবশেষে উচ্চ আদালত হোসনে আরার (নিপা রানী) মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন করার নির্দেশ দেন।