রাসিক নির্বাচন: লিটন ব্যস্ত প্রচারণায়, ঝিমিয়ে বুলবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। এ নির্বাচনে ৪৭ হাজার ৩৩২ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে পরাজিত করেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে জয়ী হওয়ার প্রায় তিন মাস পরে ১৭ সেপ্টেম্বর মেয়র পদে দায়িত্ব পান বুলবুল। আগের নির্বাচনের ৫ বছর পূর্ণ হতে বাকি থাকায় বুলবুলকে তিন মাস পরে সপথ পড়ানো হয়। সেই হিসেবে ৫ বছর ধরতে গেলে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সিটি করোপরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

সে অনুযায়ী নির্বাচনের এখনো প্রায় বছর খানেক সময় বাকি রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে জোর গণসংযোগে নেমে পড়েছেন সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নির্বাচন ঘিরে তিনি প্রায় প্রতিনিদিন ছুটে যাচ্ছেন রাজশাহী নগরীর অলি-গলিতে। আর এসময় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী মতবিনিময়ে মিলিত হচ্ছেন তিনি।

তাঁর এমন তৎপরতায় মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা উজ্জিবত হয়ে উঠছেন বলেও দাবি করেন তাঁরা। তবে এখনো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে না বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের। তবে বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করেছেন, গণসংযোগ করতে গেলেই প্রশাসন থেকে তাঁকে গণসংযোগে নামতে দিচ্ছেন প্রশাসন। বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আপাতত তিনি গণসংযোগ করছেন না।

আগামী সিটি নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন-তা নিয়েই চলছে নানা গুঞ্জন। যদিও আগামি নির্বাচনেও বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এরই মধ্যে বুলবুলকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে গ্রিন সিগন্যালও দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও মেয়র বুলবুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যাসহ প্রায় ১৯টি মামলা চলমান থাকায় নির্বাচনে তিনি শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা-সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপি থেকে এখনো চূড়ান্তভাবে কে প্রার্থী হচ্ছেন-সেটি বলা মুশকিল।

প্রক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ থেকে এবারো মেয়র পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন-এমন বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনকে ডেকে নিয়ে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সেই কথা অনুযায়ী লিটন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে নাঠে নেমে গেছেন জোর কদমে।

রাজশাহীর তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রতন আলী  বলেন, সাবেক মেয়র লিটনকে এবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি। লিটন এরই মধ্যে মাঠে নেমে নেতার্মীদের সঙ্গে এবং সাধারণ ভোটারদের সঙ্গেও মতবিনিময় করছেন। এতে নেতাকর্মীদের মাঝেও উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়েছে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমাকে দল থেকে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেই বলা হয়েছে। সেই হিসেবে আমি সার্বিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।’

লিটন আরও বলেন, ‘আমার সময়কালে রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে-তা এখনো মানুষ মনে রেখেছে। এই উন্নয়ন এখন থমকে গেছে। আগামীতে আবারো উন্নয়নের জন্যই জনগণ আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন। এবার রাজশাহী নগরবাসী আর কোনো ভুল করতে চায় না। তাই আগামী নির্বাচনে আমাকে মেয়র পদে নির্বাচিত করতে তারাই উন্মুখ হয়ে আছে। আমিও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি। নিবাচনে পরাজিত হলেও জনগণকে কখনো ছেড়ে যায়নি। বরং আরো বেশি করেই জনগণের পাশে থেকে তাদের নানা ধরনের সেবা করার চেষ্টা করেছি। ’

লিটন আরও বলেন, নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমরা উঠান বৈঠক, ওয়ার্ড সভা, গণসংযোগ, নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময়সহ নানা ধরনের কার্যক্রম করে যাচ্ছি। এসব কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।’

অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত না হলেও বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন-এমনটি শোনা গেলেও তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচনী গণসংযোগে নামেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিষয়টি স্বীকারো করেছেন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি বলেন, গণসংযোগ করতে গেলেই প্রশাসন থেকে আমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গণসংযোগে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। এক জায়গায় নেতাকর্মীদের জড়ো হতেও দেয়া হচ্ছে। তবে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আপাতত আমি গণসংযোগ করছি না। তবে নানা কৌশলে সাধারণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

স/আর