রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে ইউরোপ?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

২০২১ সালে ইউরোপে ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করেছে রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আকস্মিক হামলা চালায় মস্কো। ওই হামলাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তারপর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করে।

সে সময় রাশিয়া ঘোষণা দেয় যে, তারা ডলারের পরিবর্তে দেশটির নিজস্ব মুদ্রা রুবলেই ব্যবসায়িক লেনদেন করবে। কিন্তু রুবলের মাধ্যমে গ্যাসের অর্থ প্রদান করতে অস্বীকার করায় গত ৩১ মে নেদারল্যান্ডসের গ্যাসতেরা এবং ডেনমার্কের ওরস্টেড কোম্পানিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্তকে অনেকটা প্রতিশোধমূলক বলেই মনে করা হচ্ছে।

কারণ এর একদিন আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে।রাশিয়া এরই মধ্যে বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড এবং পোল্যান্ডের গ্যাস কোম্পানিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করায় অনেক ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকছে। জ্বালানি ইস্যুতে রাশিয়ার বিকল্প খুঁজছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে রুশ নির্ভরশীলতা কমাতে চায় তারা।

গত এপ্রিলে এলএনজি আমদানি বার্ষিক ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চের তুলনায় এই হার ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ইউরোপে এই গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার পাইপলাইনের পরিবর্তে দুই-তৃতীয়াংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে ইউরোপ। এনার্জি ইন্টেলিজেন্সের মতে, ২০২১ সালে এই মহাদেশের টার্মিনালগুলোর মাত্র ৪৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে।

কিন্তু রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া ইউরোপের অনেক দেশই এখন বিপাকে পড়েছে।
প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা এবং পরিবহনের জন্য পাইপলাইনের ঘাটতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইউরোপে এসব প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা বেশিরভাগই দক্ষিণ ও পশ্চিমে অর্থাৎ ব্রিটেন ও স্পেনেই প্রায় অর্ধেক। পূর্বের স্থলবেষ্টিত দেশ যেখানে চাহিদা বেশি তাদের সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে গ্যাস পাঠানোর পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যে দুটি পাইপলাইনের মাধ্যমে ব্রিটেন ইউরোপে গ্যাস পাঠায়, সেগুলোর কার্যক্রম শেষের দিকে।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে জার্মানি। কারণ তারা তাদের শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্যাসের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু সেখানে এখনও কোনো কার্যকরী টার্মিনাল নেই। যুদ্ধের আগে এটি রাশিয়ার কাছ থেকে ৫৫ শতাংশ গ্যাস পেয়েছে। দেশটিতে রাশিয়া সস্তায় গ্যাস সরবরাহ করেছে।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে তৎপর হয়ে উঠেছে জার্মান সরকার। গত ১৯ মে দেশটির পার্লামেন্ট কিছু টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দিতে একটি আইন পাস করে। তবে উপকূলীয় সুবিধা আরও সহজ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে একটি দ্রুত সমাধান হলো ভাসমান সংরক্ষণ সুবিধা এবং পুনরায় গ্যাসীকরণ ইউনিট তৈরি যা তরল জ্বালানিকে আবারও গ্যাসে রূপান্তর করে।

জার্মানির সরকার প্রায় তিন দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের চারটি ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা করছে। নর্থ সী’র উইলহেলমশেভেনে কয়েক মাসের মধ্যেই প্রথম প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে এবং প্রতি বছর ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ঘনমিটার ক্ষমতা সম্পন্ন এই প্রকল্প জার্মানির গ্যাসের চাহিদার প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ পূরণ করতে পারবে।

অন্যান্য দেশগুলোও একই ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পোল্যান্ড তাদের চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা ২০২৫ সালে একটি এফএসআরইউ চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং আরেকটি প্রকল্পের বিষয় বিবেচনা করছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তারা চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ায় গ্যাস বিক্রি করতে পারবে।

ফ্রান্স এবং ইতালিও বিকল্প খুঁজছে। গত ৩০ মে এসএনএএম নামের একটি ইতালীয় সংস্থা জাহাজ কেনার জন্য সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে পৌঁছায়। দীর্ঘমেয়াদে আরও কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এফএসআরইউএস-এর সঙ্গে যৌথভাবে জার্মানিও দুটি প্রক্ল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতি বছর ৫৩ বিলিয়ন ঘনমিটার আমদানি করা যাবে যা ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে যা কেনা হয়েছে তার চেয়েও বেশি। তৃতীয় একটি পরিকল্পনাও বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই এখন রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ