রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংকটের আসল কারণ কী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়া ইউক্রেনের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ আটকের পর দু’দেশের মধ্যে এখন তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে নোঙ্গর করেছিলো ইউক্রেনের ওই তিনটি জাহাজ।

জাহাজটি আটকের সময় রাশিয়ানদের গুলিতে জাহাজের ছয়জন ক্রু আহত হয়।

আসলে কী হয়েছিলো ?

সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে ক্রাইমিয়া ও রাশিয়ার মাঝামাঝি এলাকায় নৌ পথে যা কের্চ স্ট্রেইট নামে পরিচিত।

রোববার সকালে ইউক্রেনের দুটি গানবোট এবং একটি টাগবোট কের্চ স্ট্রেইট অতিক্রমের চেষ্টা করে।

কৃষ্ণ সাগরের ওডিসি বন্দর থেকে রওনা হয় আজোভ সাগরের মারিউপোলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো জাহাজগুলো।

মস্কো ও কিয়েভের ২০০৩ সালের চুক্তির আওতায় কের্চ স্ট্রেইট ও আজোভ সাগরে দু’দেশেরই অংশীদারিত্ব আছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নৌপথে আগ্রাসনের অভিযোগ তুলে দেশটি থেকে থেকে আসা ও যাওয়ার পথে সব নৌযান তল্লাশি শুরু করে।

একই সাথে আজোভ সাগরে যাওয়ার পথে রাশিয়ার তৈরি একটি ব্রিজের নীচে ট্যাংকারও মোতায়েন করেছে রাশিয়া।

সাথে আছে দুটি জেট ফাইটার ও দুটি হেলিকপ্টার।

ইউক্রেনের নৌবাহিনী বলছে, তাদের জাহাজকে আঘাত করে অকার্যকর করা হয়েছে বলেই তারা ওই এলাকা ত্যাগ করতে পারেনি।

এসব জাহাজে ২৩জন নাবিক ছিলো যাদের মধ্যে ছয় জন আহত হয়েছে।

এ ঘটনার গুরুত্ব কতটা বা কতটা মারাত্মক ঘটনা এটি?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথম এমন দ্বন্দ্বে জড়ালো রাশিয়া ও ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী।

বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে লড়াই করছে দেশটির সেনাবাহিনী।

এর মধ্যেই মার্শাল ল জারীর বিষয়ে ব্যতিক্রমী এক অধিবেশনে বসার কথা ইউক্রেনের পার্লামেন্টের।

সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে রাখা হয়েছে।

যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো বলেছেন, এর মানে এই নয় যে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কীভাবে দু’পক্ষ দায়িত্ব এড়াচ্ছে?

ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া তাদের নৌ বাহিনীর জাহাজ মারিউপোলের দিকে এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে এবং তাদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সশস্ত্র আগ্রাসনের আরেকটি দৃষ্টান্ত।

অন্যদিকে রাশিয়া পাল্টা ইউক্রেনের বিপক্ষে ‘পূর্ব পরিকল্পিত উস্কানি’র অভিযোগ তুলেছে।

মনে হচ্ছে মার্শাল ল আর সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মূলে আসলে আগামী মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করা।

মার্শাল ল জারী হলে সরকারের হাতে প্রতিবাদ বিক্ষোভে নিয়ন্ত্রণ কিংবা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ কিংবা নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা আসবে।

প্রতিক্রিয়া কেমন হচ্ছে?

রোববারই কিয়েভে রাশিয়া দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে এবং দূতাবাসের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কের্চ স্ট্রেইটে যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত করতে রাশিয়ার প্রতি আহবান জানিয়েছে।

এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দু পক্ষকেই সংযমের আহবান জানিয়েছে তারা।

যদিও তারা বলছৈ কের্চ ব্রিজের নির্মাণে যে পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া সেটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।

আর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বলছে সোমবারই তারা জরুরি সভায় বসবে।

রাশিয়া – ইউক্রেন সম্পর্কে কতটা উত্তেজনা বিরাজ করছে?

চরম উত্তেজনা। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখলের একমাস পর মস্কো পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয় ডোনেৎস্ক ও লুহান্সকের পূর্বাঞ্চলে।

এ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছে প্রায় দশ হাজার মানুষ।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছে ইউক্রেন।

মস্কো অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যদিও স্বীকার করেছে রাশিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে।

গত মার্চে ক্রাইমিয়া থেকে একটি মাছ ধরার নৌযান ইউক্রেন আটক করে এবং এর পর রাশিয়া জাহাজে তল্লাশি শুরু করে কের্চ স্ট্রেইটে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন রাশিয়ার বাধানিষেধের প্রভাব পড়ছে তার দেশের অর্থনীতিতে।

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন মারিউপোল থেকে লোহা ও স্টিল উৎপাদন তার দেশের রপ্তানির ২৫ ভাগ চাহিদা মেটায়।

আর ইউক্রেনের উত্তর উপকূলের দুটি বন্দর বার্ডিয়ানস্ক ও মারিউপোল কয়লা আমদানি ও রপ্তানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।