রামেবি উপাচার্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) উপাচার্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি করেছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি (গত ১৬ এপ্রিল) রামেবি’র সেকশন অফিসার মো. জামাল উদ্দীনের এক রিট পিটিশনের (৪২৫০/২০১৯) শুনানি শেষে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চের বিচারপতি এফ.আর.এম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কে.এম কামরুল কাদের এ রুলনিশি জারি করেন।

বাদী পক্ষে রিট পিটিশনের শুনানীতে অংশ নেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রশীদ ও মো. জাহাঙ্গীর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও প্রহ্লাদ দেবনাথ।

আদেশে হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয় গত ১০ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ এবং ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের সিদ্ধান্তের নথিপত্র পর্যালোচনা করে রিট পিটিশনার মো. জামাল উদ্দীনকে (বর্তমানে এডহকে কর্মরত) রামেবি’র সেকশন অফিসার পদে কেন স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হবে না? তার জবাব আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করার জন্য বিবাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, রামেবি’র উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আদেশের তারিখ থেকে সেকশন অফিসার মো. জামাল উদ্দীনকে বিচারাধীন রিট পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৬ মাসের জন্য স্বপদে বহাল (স্থিতাবস্থা) রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদ্বয়।

জানা যায়, রিট পিটিশনার মো. জামাল উদ্দীন গত ১২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে রামেবির সেকশন অফিসার পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে তাকে সেকশন অফিসার পদে (এডহক ভিত্তিতে) ৬ মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং যথাক্রমে কলেজ পরিদর্শক, রেজিষ্ট্র্রার, জনসংযোগ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্থায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় পরবর্তীতে তাঁর এডহক নিয়োগের মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়, যা ২১ এপ্রিল ২০১৯ শেষ হয়।

সূত্র জানায়, গত ০১ জুলাই ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় সিন্ডিকেট সভার আলোচ্যসূচি নং ৬ এ এডহক ভিত্তিতে নিয়োগকৃত পদে স্থায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞাপনের আলোকে জামাল উদ্দীন বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে আবেদন করেন এবং কর্তৃপক্ষের আহবানে ১০ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে সাক্ষাৎকার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে গত ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখের ৩য় সিন্ডিকেট সভার আলোচ্যসূচি নং ৫ এর সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটির সুপারিশ অনুমোদিত হয়। সিন্ডিকেটের সভা শেষে তিনি জানতে পারেন যে, নিয়োগ কমিটি সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে (আবেদিত পদে) অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে মর্মে তাকে ওই পদের (সহকারী কলেজ পরিদর্শক) পরিবর্তে বর্তমানে এডহক ভিত্তিতে কর্মরত সেকশন অফিসার পদে স্থায়ী নিয়োগের সুপারিশ করেছে এবং নিয়োগ কমিটির ওই সুপারিশ সিন্ডিকেট যথারীতি অনুমোদন করেছে। এরপর নিয়োগ কমিটির সুপারিশকৃত ও ৩য় সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত এডহক ভিত্তিতে কর্মরত ১৭ জনের মধ্যে তাকে ছাড়া ১৬ জনসহ মোট ২৪ জনকে গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে স্থায়ী নিয়োগপত্র দিয়ে যোগদান করানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে জামাল উদ্দীনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগপত্র ইস্যু ও যোগদান করানো হয়নি।

এবিষয়ে তিনি বিভিন্ন সময় মৌখিকভাবে নিয়োগ বোর্ড ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে নিয়োগপত্র ইস্যুর জন্য বিনীত অনুরোধ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় চার (৪) মাস অতিবাহিত হলেও রামেবি কর্তৃপক্ষরতার স্থায়ী নিয়োগপত্র ইস্যু না করায় গত ৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে তিনি স্থায়ী নিয়োগপত্র ইস্যুর জন্য লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে রামেবি কর্তৃপক্ষ তার স্থায়ী নিয়োগপত্র ইস্যু করেনি এমনকি তাকে স্থায়ী নিয়োগপত্র না দেয়ার কারণও জানায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি গত ১৬ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে উক্ত রিট পিটিশন (নং-৪২৫০/২০১৯) দাখিল করেন। উক্ত রিট পিটিশনের শুনানি অন্তে মহামান্য হাইকোর্ট তার স্থায়ী নিয়োগের বিষয়ে উক্ত রুলনিশি জারি করেন এবং বর্তমানে এডহকে কর্মরত সেকশন অফিসার পদে চাকুরী অব্যাহত রাখার বিষয়ে ৬ মাসের স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মতামতের জন্য রামেবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত একাধিক মোবাইলে কয়েকবার রিং করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে যোগোযোগ করা হলে রামেবি’র অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএমএ হুরাইরা বলেন, হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেয়েছি এবং সেটা উপাচার্য বরাবরে অগ্রগায়ন করা হয়েছে। এখন কি সিদ্ধান্ত হবে সেটা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।’

যোগোযোগ করা হলে রামেবি’র পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সৈয়দ ইব্রাহিম কবীর বলেন, ‘আমি তো কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নই, তবে যতদূর জানি, বিষয়টা যেহেতু আইনী প্রক্রিয়ায় দাঁড়িয়েছে, সেহেতু কর্তৃপক্ষও তা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করবেন।’

স/অ