রামেক হাসপাতালে ভুলে ভুলেই মারা গেলো রোগিটি!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার বার ভুলের কারণে মারা গেলেন বিনা রানী (২৮) নামের এক রোগী। এমনই অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। এ নিয়ে স্বজনদের মাঝে চরম ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালককে গতকাল শনিবার অভিযোগও করেছেন মৃত বিনা রানীর স্বজনরা।

মৃত বিনা রানী জেলার তানোর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের বিষূ চন্দ্রের স্ত্রী। তিন সন্তানের জননী বিনা রানীর মাত্র এক মাস বয়সেরও একটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর এই অকাল মৃত্যুতে এই শিশু সন্তানকে নিয়ে এখন বিপাকে পড়লেন গরিব দিনমজুর বিষু।

বিনা রানীর স্বামী বিষু চন্দ্র অভিযোগ করে জানান, বার বারর মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়ার কারণে অবস্থা খারাপ দেখে গত ২২ এপ্রিল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আনা হয়েছিল বিনা রানীকে। ওইদিন দুপুরে রামেক হাসপাতালে আনার পরে জরুরী বিভাগ থেকে তাঁকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য নির্দেশনা দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালের ট্রলি চালক ভুল করে বিনা রানীকে নিয়ে যান ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এরপর টানা দুই দিন ওই ওয়ার্ডেই ভুল চিকিৎসা চলে বিনা রানীর। সেখানে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয় চিকিৎসকদের পরামর্শে। কিন্তু গত ২৪ তারিখে ওই ওয়ার্ডের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এসে দেখেন, বিনা রানীকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এরপর সেদিনই ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিনা রানীকে পাঠানো হয় ৩৮ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে।

বিষু চন্দ্র জানান, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানোর পর ওইদিনই আবার নতুন করে রোগীর ক্লোনস্কপিসহ আরো কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়। যেসব পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না বলে গরিব বিষু চন্দ্র ছুটে যান নগরীর লক্ষীপুরে পপুলরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পরের দিন ২৫ এপ্রিল সকালে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রোগীর রিপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু বিনা রানীর পরিবর্তে শ্রী রাজেশ কর্মকার নামের এক রোগীর এন্ডোস্কপির রিপোর্ট দেওয়া হয়। অশিক্ষিত বিষু সেই রিপোর্ট নিয়ে আসেন হাসপাতালে। ওই রিপোর্ট দেখে শুরু হয় রোগীর চিকিৎসা। কিন্তু গত ২৬ এপ্রিল ওই ওয়ার্ডের আরেকজন চিকিৎসক এসে দেখেন বিনা রানীর রিপোর্ট এটি নয়। রাজেশ নামের এক রোগীর রিপোর্ট ধরে চলছিল রোগীর চিকিৎসা। এরপর দ্রুত ওইদিনই আবারো ক্লোনস্কপির রিপোর্ট আনতে পাঠানো হয় পপুলারে। পাশাপাশি ভুল রিপোর্টটিও ফেরত দিতে বলা হয়। তৎক্ষণে রোগীর স্বজন ও বাংলাদেশ হিন্দু-বদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি বাবু রাজকুমার পপুলার ডায়াগনস্টিক থেকে দেওয়া ভুল রিপোর্টটির কয়েকটি ছবিও তুলে রাখেন। কিন্তু সেইদিন রাত তিনটার দিকে শেষ পর্যন্ত রোগীটি মারা যায়।

রোগীর স্বজন বাবু রাজকুমার অভিযোগ বলেন, ‘এভাবে একের পর এক ভুল করে রোগীকে মেরে ফেলার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। আমি নিজেই এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এবং পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষও মাফ চেয়ে পার পেয়ে গেছে। তবে যে রোগীটি মারা গেলো তার পরিবারের এখন কি হবে?’

যোগাযোগ করা হলে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার ফরিদ শামীম বলেন, আমাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডেলিভারি কাউন্টার থেকে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নাই। কেউ আমাকে এ নিয়ে অভিযোগ করেনি। তার পরেও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।’

তবে রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা: মাহবুবুবর রহমান বাদশা বলেন, পপুলার থেকে অন্য এক রোগীর রিপোর্ট পাঠানে হয়েছিলো। বিষয়টি নজরে আসার পরে শুক্রবার রাতেই সেটি ফেরৎ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি বিনা রানীর রিপোর্ট চাওয়া হয়। তবে তারা সেদিন রিপোর্ট দিতে পারেনি। এরপর রাতে রোগীটি মারা যায়।

এদিকে ওই রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে রাজশাহী মাহনগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শফিকুর রহমান বাদশা ও বাবু রাজকুমার মৌখিকভাবে অভিযোগ করে আসেন। অভিযোগ পাওয়ার পরে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বিষযটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন।

স/আর