নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) চার বছর আগে নির্মাণ শেষে হওয়া ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চার তলা নতুন ভবনে তিন তলার লিফটের সামনের অংশের টাইলস উঠে যাওয়ার পরে সেখানে বাঁশের ছবি দেখা গেছে। রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত ওই বাঁশের ছবি সোমবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
- অনেকেই সিল্কিসিটি নিউজের ফেসবুক পেজ ও মেইলেই ওই বাঁশের ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। ঘটনাটি সরেজমিন দেখতে গিয়ে ভাঙা স্থানে প্লাস্টার করার দৃশ্য দেখা গেছে। প্লাস্টারের ওপরে আবার পুরনো কাপড় দিয়ে ঢেঁকে দেওয়া হয়েছে। আবার বাঁশের ওপরে পত্রিকা দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে।
এর আগে গত ২০১২ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল আমিন উদ্বোধন করেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০০০ শয্যার নতুন ভবনটি। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলা এ ভবনটি নির্মাণ করা হয় হাসপাতালের পুরনো ভবনগুলোর মাঝখানে। অর্থাৎ হাসপাতালে ঢুকতেই হাতের ডান দিকে। কিন্তু এই ভবনের লিফটে সামনে ভাঙা স্থানে বাঁশ দেখা গেছা।
মোটা আকৃতির বাঁশ কেটে ফালা করে (বাতা) ব্যবহার করা হয়েছে রডের পরিবর্তে। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ওই স্থান আবার প্লাস্টার করে দিয়েছে। যদিও টাইলস ভাঙা স্থানের নিচেই বাঁশ দেখা গেছে। কিন্তু টাইলসের ওই স্থানটিতে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। আর বাঁশের ওপরে পত্রিকা বিছিয়ে গতকাল সেখানে প্লাস্টার করা হয়েছে।
এদিকে লিফটে রোডের পরিবের্ত বাঁশ ব্যবহারের ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় হাসপাতাল জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি দেখার জন্য গতকাল সোমবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় লিফটের সামনে ভাঙা স্থানটিতে গতকালই প্লাস্টার করা হয়েছে। এবং প্লাটারের ওপরে বিষয়টি যেন চোখে না পড়ে এর জন্য পুরনো কাপড় দিয়ে ঢেঁকে দেওয়া হয়েছে।
- এদিকে বাঁশ ব্যহারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য রাতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি আমাকেও কয়েকজন জানিয়েছে। তবে আমি দেখিনি। আর ওই ভবনটি নির্মাণ হয়েছে ৪-৫ বছর আগে। আমি আসার আগে। ভবনটি নির্মাণ করেছে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ। তারাই বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন।’
ভাঙা স্থানে কারা নতুন করে প্লাস্টার করেছে, সেটি জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, এটিও মনে হয় গণপূর্ত বিভাগের লোকজনই করে গেছে। কারণ ভবনটি তারাই করেছে।
এদিকে রোডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে রাতে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লতিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে হাসপাতালে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে রোগী ও স্বজনদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে এভাবে বাঁশ দিয়ে চার তলা এই ভবনটি নির্মাণের কারণে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন রোগী ও স্বজনরা।
- জানতে চাইলে হাসপাতালর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন আবুল কাশেম বলেন, ‘এত বড় অনিয়ম এর আগে কখনো শুনিনি। হাসপাতালের ভবন যদি বাঁশ দিয়ে নির্মাণ হয় তাহলে এই ভবনের ভবিশ্যত কি হবে? আর ভবন ভেঙে গেলে রোগীরা কিভাবে সরে পড়বে? তখন বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।
বিষয়টি তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও প্রকৌশলীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে জোর ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন হাসপাতালের একাধিক কর্মককর্তা-কর্মচারী। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ হাসপাতালটির নতুন ভবনটি এখন চরম অনিরাপদ। এ ভবনে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হলেও এটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটলও দেখা দিয়েছে।
স/আর