ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল পন্থীরা এখনো সক্রিয়

রামেক হাসপাতালের কর্মচারিদের অসন্তোষ কাটছেই না

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থায়ী কর্মচারিদের মধ্যে অসন্তোষ কাটলেও অস্থায়ী কর্মচারিদের মধ্যে কাটেনি। বর্তমান পরিচালক রামেক হাসপাতালে যোগ দেয়ার পর স্থায়ী কর্মচারিদের মধ্যে চলা দীর্ঘ দুই বছরের অসন্তোষ নিরসন হয়েছে। কিন্তু এখনো একটি বড় অংশ আউট সোর্সিং ও দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারিদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

তবে মুষ্টিমেয় কিছু কর্মচারিদের জন্য যেমন হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সেবার মানও কমছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রামেক হাসপাতালের পরিচালকের দাবি, স্থায়ী কর্মচারিদের মধ্যে যে রেষারেষি, দলাদলি, কর্তৃত্ব ফলানোর বিষয়টি ছিল সেটি নিরসন হয়েছে। কিন্তু অস্থায়ী কর্মচারিদের মধ্যে এখনো অনিয়ম ও ভেতরে কোন্দল চলছে। যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, বিগত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদারি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মূলত রামেক হাসপাতালের কর্মচারিদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। কারণ সাবেক পরিচালক নিজের পছন্দমত লোকজন নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে ওয়ার্ড মাস্টার অফিসে ইনচার্জ থাকার পরও পরিচালক সেখানকার জুনিয়র মাস্টার রাসেল আলীকে কর্মচারিদের পরিচালনা জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এতে সিনিয়র কর্মচারিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। রাসেল নিজের ইচ্ছেমত কর্মচারিদের যেখানে খুশি সেখানে ডিউটি দিয়েছেন। নিজের ইচ্ছেমত দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারিদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন নিয়োগ দিয়েছেন্। আর এতে সমর্থন করেছেন সাবেক পরিচালক। এসব কার্যকলাপে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্থায়ী বা অস্থায়ী কর্মচারিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

পরিচালকের উপর ভর করে হাসপাতালের সার্বিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলো ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল। তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না খোদ ওয়ার্ড মাস্টার অফিসের ইনচার্জকেও। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে কর্মচারি থেকে বাদ দেয়া আবার টাকার বিনিময়ে নতুন লোক নিয়োগ দেয়া বাণিজ্য ছিল রাসেলের প্রধান কাজ এমন অভিযোগ কর্মচারিদেও মুখে মুখে রয়েছে। এছাড়াও রাসেলের বিরুদ্ধে কর্মচারিদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা তোলার অভিযোগ ছিল।

এ নিয়ে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রচার হয়েছে। চাকরি দেয়ার কথা বলে রাসেল যাদের কাছে টাকা নিয়েছিল সেইসব ব্যক্তিরা টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনও পর্যন্ত করেছে। এসব কারণে সাবেক পরিচালক তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যদিও সাবেক পরিচালকের সময় তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিরুদ্ধে তদন্ত পুনরায় শুরু হয়। তদন্ত শেষে কমিটি প্রতিবেদক দাখিল করে। প্রতিবেদনে উঠে আসে রাসেলের নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য।

অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল ছোটখাটো কারণ দেখিয়ে দৈনিক মজুরী ভিক্তিক কর্মচারি বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছেন। আউট সোর্সিংয়ে অনেক লোজনদের তিনি টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন। অনেককেই চাকরি দেবো বলে টাকা নিয়ে ফেরত দেয়নি। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি তার দুটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ তাকে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্ব থেকে বদলী করার সুপারিশ করেন।

কিন্তু বিষয়টি ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল জানার পর সাবেক পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তিনি বদলী আদেশ ঠেকান। বদলীর আদেশ ঠেকালেও তিনি ইনক্রিমেন্ট বহাল রাখতে পারেন নি। একই সাথে রাজস্ব খাতের কর্মচারি রাজিবুল এসব অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকায় তাকে সতর্ক করা হয় এবং আউট সোর্সিংয়ের দুজন কর্মচারি চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতদের দিয়ে রাসেল নিয়োগ বাণিজ্য করতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর নিয়োগ করা লোকজনদের তিনি এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মচারিরা জানান, আউট সোর্সিং ও দৈনিক মজুরী ভিত্তিকের অনেক কর্মচারি আগের মতই চলছে। বিশেষ করে সাবেক পরিচালকের সময় রাসেলের নিয়োগ করা কর্মচারিরা অনেকেই হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে বাড়ি চলে যেতেন। ঠিক মত ডিউটি করতেন না। তারপরও মাসের পর মাস বেতন দেয়া হতো।

ওইসব কর্মচারিদের রাসেল এখনো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। যার কারণে বর্তমান পরিচালক সব কর্মচারিদের এক কাতারে নিয়ে আসতে হিমশিম খাচ্ছেন। পরিচালক চেষ্টা করছেন কর্মচারিদের কর্মমুখর করতে, আর রাসেল আলী ওইসব কর্মচারিদের নানান ইন্ধন দিয়ে পরিচালকের চেষ্টাকে ব্যর্থ করার পাঁয়তারা করছে। তবে চিকিৎসক, নার্স, স্থায়ী, অস্থায়ী কর্মচারিরা ওয়ার্ড মাস্টারের রাসেলের বিগত দিনের অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর প্রথমত ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছেন। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে তিনি কর্মচারিদের এক টেবিলে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। বর্তমান পরিচালকের কড়া নির্দেশনা রয়েছে যে কাজ করলে চাকরি আছে, না করলে নাই। কিন্তু ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল পন্থী কর্মচারিরা তার ইন্ধনে এখনো ঠিক মত ডিউটি করছে না। কর্মচারিরা রাসেলের কথায় ভেতরে ভেতরে হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টারও অভিযোগ রয়েছে রাসেলের বিরুদ্ধে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাচ্ছেন পরিচালক ও দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদের সাথে। তিনি বলেন, আমি রামেক হাসপাতালের দায়িত্ব পর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আগে দেখেছি। বর্তমান রামেক হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কমতি নেই। কর্মচারিদের নিয়ে আমি বসেছি। কর্মচারিদের সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করছি। কর্মচারিদের বড় সমস্যা যেটা ছিল সেটা সমাধান করা হয়েছে। বাকিটাও দ্রুত সমাধান হবে আশা করি। তিনি বলেন, আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চাকরি করতে এসে যেসব কর্মচারি নিজের ইচ্ছায় চলবে বা দায়িত্ব পেয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করবে, আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তাদের এই হাসপাতালে চাকরির কোনো সুযোগ নেই।