রামেক কর্মচারীর ক্ষমতার দাপটে তটোস্থ চিকিৎসকরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এক মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টের (ল্যাব) ক্ষমতার দাপটে অতিষ্ঠ চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। ক্ষমতার দাপটে নিজের ইচ্ছামত অফিস করেন ওই টেকনোলজিষ্ট। আবার এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেও উল্টো তাদেরকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান তিনি। এ নিয়ে পরিচালকের দপ্তরে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগের পরে তাঁকে বদলি করা হলেও আবারো তাঁকে একই পদে বহালের চেষ্টা-তদবির চলছে। কামরুজ্জামানকে আবারো স্বপদে ফেরানোর কথা শুনে হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি প্রেষণে ওই পদে নিযুক্ত ছিলেন। আবারো তাঁকে একই পদে ন্যাস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতাল সূত্র মতে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল ফিজিওলোজি বিভাগের ল্যাক টেকনোলজিস্ট পদে কর্মরত আছেন কামরুজ্জামান। কিন্তু ২০০৪ সালের ২৪ অক্টোবর তাঁকে প্রেষণে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের সিসিইউ-এর ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে প্রেষণে নিযুক্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি গত বছরের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু এই ১৪ বছরে তিনি নিজের ইচ্ছামতো অফিস করেছেন। কখনো কখনো ছুটি না নিয়েই দিনে পর দিন অফিস ফাঁকি দিয়েছেন এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করতেন না। এতে করে রোগীদের যেমন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, তেমনি চিকৎসকদেরও সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এই অবস্থায় কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে গত বছরের ২৮ আগস্ট রামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর থেকে কামরুজ্জামানকে কৈফিয়ত তলব করা হয়। এতে বলা হয়, কামরুজ্জামান হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন না, মাসিক ওয়ার্কিং ষ্টেটমেন্ট গ্রহণ করেন না ও কোনো ধরনের ছুটি গ্রহণ বা কর্মস্থল ত্যাগ করলেও অনুমতি নেন না। এই চিঠি পাওয়ার পরে কোনো সদুত্তোর না দিতে পারায় কামরুজ্জামানকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর আগের কর্মস্থলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়, প্রত্যাহারের পরে আবারো ওই কর্মচারীকে প্রেষণে কার্ডিওলোজির সিসিইউ’র ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে নিযুক্ত করার চেষ্টা-তদবির চলছে। অথচ এই ল্যাবে এরই মধ্যে তিনজন দক্ষ জনবল তৈরী করে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। ফলে কামরাজ্জামানকে এখন আর কোনো প্রয়োজন নাই। কিন্তু আবারো অফিস ফাঁকি দিয়ে বসে থেকে বেতন তোলার চেষ্টার জন্য কামরুজ্জামান আবারো সিসিইউ’র ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে প্রেষণে নিযুক্ত হতে চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন বলে জানান অন্যান্য কর্মচারীরা। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী বলেন, ‘কামরুজ্জামান ওই পদে থাকাকালীন কার্ডিওলোজি বিভাগের সিসিইউ ল্যাবটিকে ইচ্ছামতো পরিচালনা করতেন। এতে করে রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হতেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো কর্মচারীদেরকেই তিনি নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতেন এবং খারাপ আচরণ করতেন। এমনকি চিকিৎসকদের সঙ্গেও তিনি খারাপ আচরণ করতেন। তার এই কর্মকাণ্ডগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্ত করে বিধিমোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রধানও লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে আবারো প্রেষণে ওই পদে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। এতে করে কর্মচারীদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।’

জানতে চাইলে ল্যাব টেকনোলজিস্ট কামরুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সঠিক নয়। কিন্তু আমাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালের প্রয়োজনে আমাকে সিসিইউতে পাঠানো হলে আবারো সেখানে কাজ করতে চাই।’

এদিকে হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখানে আর নতুন করে কোনো ল্যাব টেকনোলজিস্ট দরকার নাই। কারণ আমরা এরই মধ্যে তিনজন দক্ষ ল্যাব টেকনোলজিস্ট তৈরী করে ফেলেছি। এর আগেও কামরুজ্জামানকে ওই পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ঠিকমতো কাজ করতেন না। এতে করে সিসিইউ’র কাজ ব্যহত হচ্ছিল। রোগীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। কাজেই তাঁকে আমাদের আর প্রয়োজন নাই।’