রাবি শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে কলেজ ছাত্রকে গ্রেফতার

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী কলেজের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৫। গ্রেফতার শিক্ষার্থীর নাম মো. মিজানুর রহমান (২৮)। তিনি নগরের মতিহার থানাধীন খোজাপুর এলাকার মো. আজিম উদ্দিনের ছেলে। গত ৯ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

র‌্যাবের ভাষ্য, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর থানাধীন আলীনগর হাজীর মোড়সংলগ্ন এলাকা থেকে মিজানুরকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পরিবারের দাবি, পাঁচ দিন আগেই মিজানুরকে আটক করে র‌্যাব। এত দিন অনেক খোঁজ করেও মিজানুরের খোঁজ পাচ্ছিল না তারা। র‌্যাবও তাদের তথ্য দিচ্ছিল না।

পরিবারের দাবি অনুযায়ী, মিজানুর রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে বর্তমানে রাজশাহী কলেজে একই বিষয়ে মাস্টার্স করছেন।

মিজানুরের ছোট ভাই নবাব শরীফ বলেন, ৯ এপ্রিল ইফতারের আগে মতিহার থানার বিনোদপুর এলাকার মণ্ডলের মোড় থেকে মিজানুরকে র‍্যাব তুলে নেয়। তাঁদের কাছে এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। সেদিন রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে র‍্যাব অফিসে যোগাযোগ করেন তাঁরা। র‍্যাব থেকে জানানো হয়, মিজানুরকে পরদিন আদালতে চালান করা হবে। পরদিন তাঁরা আবার যোগাযোগ করলে র‍্যাব জানায়, থানার মাধ্যমে আদালতে চালান করা হয়েছে। তাঁরা থানায় খোঁজ করলে তাঁর ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাননি। পরে আবার তাঁরা র‍্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এবার র‍্যাব আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। এ নিয়ে তাঁরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ জিডি নেয়নি।

মামলায় র‍্যাব ইতিমধ্যে ১২ মার্চ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এই মামলায় মিজানুরের নাম ছিল না। নবাব শরীফ আরও বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁরা জানতে পারেন র‍্যাবের একটি গাড়ি নগরের মতিহার থানায় ঢুকেছে। লোক মারফত তাঁরা জানতে পারেন, রাতে তাঁর ভাইকে র‍্যাব থানায় হস্তান্তর করেছে। পরে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন। তাঁরা শুনেছেন, একটি মারামারির ঘটনায় র‍্যাব তাঁকে আটক করেছে।

মিজানুরকে আটকের পর র‍্যাবের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে র‍্যাব জানায়, ৯ মার্চ রাতে নগরের মতিহার থানাধীন ধরমপুর পূর্বপাড়ায় এন আর ছাত্রাবাসে নামাজ পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নাফিউল হককে (২০) মারপিটসহ হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। ছুরির আঘাতে তাঁর হাতের ও পায়ের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। ঘটনা ঘটিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। এ বিষয়ে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মো. শরীফুল ইসলাম (২২) বাদী হয়ে সাতজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন। এ মামলায় র‍্যাব ইতিমধ্যে ১২ মার্চ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এই মামলায় মিজানুরের নাম ছিল না।

র‍্যাবের দাবি, নাফিউলের বন্ধু তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম মামলার এজাহারে বলতে পারেননি। তবে তদন্তে মিজানুরের জড়িত থাকার বিষয়টি এসেছে। মিজানুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

র‍্যাবের রাজশাহী-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. নাজমুস শাকিব বলেন, র‍্যাব মিজানুরকে আগে কোথাও থেকে আটক করেনি। গতকাল রাতে তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‍্যাবের আটকের সিসিটিভি ফুটেজ পরিবারের কাছে আছে এ কথা জানালে তিনি বলেন, এমনও হতে পারে অন্য কোনো সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা এই মামলায় জড়িত আরও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শিগগিরই গ্রেফতার করবে।

নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলী বলেন, ছুরিকাঘাতের মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে র‍্যাব আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। জিডি না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জিডি করার জন্য কেউ আসেনি। আর তিনি (মিজানুর) তো ওই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।

সূত্র: প্রথম আলো