রাবি নয়া ভিসি : শ্যাম রাখি না কুল…

লেখকের ফাইল ছবি

গোলাম সারওয়ার: 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভিসি প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার পড়েছেন চরম দোটানায়। একদিকে শিক্ষার্থী, অন্যদিকে সরকার। কোনদিকে যাবেন তিনি। একপারে সীমাহীন দুর্ভোগের জন্য আবাসিক হলগুলো খুলে দিতে শিক্ষার্থীদের দাবি, আরেক পারে টিকা ব্যবস্থাপনার সরকারি নির্দেশ। একজন প্রকৃত শিক্ষক মনেপ্রাণে চান শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার জন্য, কিন্তু যাত্রার শুরুতেই তাঁকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবিকে অগ্রাহ্য করতে হচ্ছে। তাতে করে তিনি শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার জায়গাটাতেও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক হিসেবে এটা তাঁর জন্য অনেক বেদনার।যার কারণেই তিনি হয়তো সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, `শিক্ষার্থীদের আবেগের জায়গা থেকেই তারা হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি তুলেছে। আমাদের খারাপ লাগছে যে, এই সময় আমরা হল খুলতে পারছিনা’। এতেই বোঝা যায়, নয়া ভিসি বর্তমানে কতটা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন।তবে আমরা মনে করি, সবকিছুই যেখানে স্বাভাবিক, কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতার চিহ্ন নেই; এমনকি স্কুল-কলেজ খুলে গেছে,সেইসব ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও টিকা দেয়া হয়নি, হাটে-বাজারে জনতার স্রোত,সশরীরে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে, সংক্রমণের হারও পাঁচ ভাগে নেমে এসেছে-সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের  চলমান পরিবেশের দিকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীদের মহাভোগান্তির মধ্যে ফেলে না দিয়ে, অমানবিক এবং অনিরাপদ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দিয়ে হলসমূহ দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করাটা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৯ ও ২০২০ সালের বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছে। সে মোতাবেক বিভাগগুলো পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। অনেক বিভাগ পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। কারো ফর্ম ফিলাপ চলছে, অনেক বিভাগের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এই কারণে আবাসিক হলের ছাত্র-ছাত্রীরা তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে চলে এসেছে। হল বন্ধ থাকায় তারা ক্যাম্পাসের কাছাকাছি বিভিন্ন মেস ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে গাদাগাদি করে থাকছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গরিব,নিম্নবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত ঘর থেকে আসা। যার কারণে অর্থনৈতিক বিষয়টা তাদের মাথায় রাখতে হয়। অনেক মেসের মালিকরা সুযোগ বুঝে ভাড়াও বৃদ্ধি করেছে। যার কারণে তাদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছেননা।বহু শিক্ষার্থী  দিনের পর দিন ঘুরেও চাহিদানুযায়ি মেসে সিট পাচ্ছেননা। একজনের সিটে তিনজনও থাকছেন। দ্রুত পরীক্ষার সময় চলে আসায় অনেকে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মেস মালিকরা দুই মাসের অগ্রিম ভাড়াও নিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে স্কুল-কলেজও খুলে গেছে কিন্তু তাদের হোস্টেল বন্ধ রয়েছে। এইসব হোস্টেলের শিক্ষার্থীরাও নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেসে উঠেছে।করোনার কারণে দীর্ঘসময় শিক্ষার্থী না থাকায় অনেক মালিক মেস পরিবর্তন করে বাড়ি বানিয়ে ফ্যামিলি ভাড়া দিয়ে দিয়েছে।যার কারণে মেসের সংখ্যাও কমেছে।হঠাৎ করে চাহিদাও বেড়ে গেছে। তার উপরে আরো প্রায় দুই লাখ ভর্তি-ইচ্ছুক এবং তাদের অভিভাবকেরা আসবেন রাজশাহীতে। সব মিলে দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের গভীর আবাসন সংকট। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব খবর প্রচার হচ্ছে।

এদিকে আগামি ১, ২ এবং ২২,২৩ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৪, ৫ ও ৬ অক্টোবর। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪ হাজার ১৯১টি আসনে ৩টি ইউনিটে ৪৫ হাজার করে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিবে। সাথে অভিভাবক মিলে ২ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে রাজশাহী শহরে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় বেশিরভাগ অতিথি বিভিন্ন হলসহ ক্যাম্পাসের অন্যান্য বিল্ডিংয়ে অবস্থান করেন।অনেকে মেস,আবাসিক হোটেলসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও থাকেন।এবার হল খোলা না থাকার কারণে এই দুই লক্ষাধিক মানুষের সিংহভাগ কোথায়,কীভাবে থাকবেন-তা বিরাট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজশাহী নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩/৪ হাজার মেস আছে।এর মধ্যে বহুতল বিশিষ্ট আছে ৪৫০টি।এক অনুসন্ধানে জানা গেছে,এখুনি এসব মেসের সিট বুক হয়ে গেছে। বড় বড় মেসগুলোতে “সিট খালি নেই ” সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।নগরীতে ছোট বড় মিলে আবাসিক হোটেল আছে ৬০-৬৫টি।সেখানে ২ হাজারের অধিক সিট নেই।এমতাবস্থায় হাজার হাজার এসব অতিথিদের থাকা,খাওয়া, গোসল, প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন কোথায়,কীভাবে হবে? ভর্তি পরীক্ষার সময় অতিথিদের হলে থাকার বিষয়ে ছাত্রদের দাবির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন,”ওরাতো আবেগের জায়গা থেকে বলবেই, এখন আমাদের যে সকল শিক্ষার্থী পড়ছে,তাদের প্রায়োরিটি দিচ্ছি”।এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন আসতে পারে,তবে যারা বাইরে থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসবে, তারা ভাবনার তলানীতে?

ছোট আকারে হলেও ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে ৫ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে।প্রধান দাবি হলো,৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল খুলে দিতে হবে।অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস খুলে যে সমস্ত ক্লাস অনলাইনে হয়েছে,সেগুলোর জন্য কাউন্সিল ক্লাস নিশ্চিত করা,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে যারা টিকা পায়নি,তাদের অতি শীঘ্রই টিকা নিশ্চিত করা,মেসে রাত্রি যাপনের সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা,ভর্তি পরীক্ষার সময় সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে হেল্পডেস্ক বসানোর অনুমতি দেয়া।১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে সাধারণ ছাত্ররা  বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কাছে মানববন্ধন করেন।পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মূল প্রশাসন ভবনের সামনে সমাবেশ করে।সেখান থেকে তারা ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি প্রদান করেন।শিক্ষার্থীরা হল খোলার বিষয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন।অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।তবে ভিসি তাদের সাফ জানিয়ে দেন,”১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার আগে হল খুলছেনা।স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে হল খুলে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিকা না নেয়া হলে, আমরা হল ক্যাম্পাস খুলতে পারছিনা।৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা পরিষদ সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।কিন্তু,শিক্ষার্থীরা হল-ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার জন্য যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে,টিকা নেয়ার ব্যাপারে ততটা আগ্রহ করছে না”।

শিক্ষার্থীদের টিকা নেয়ার অনাগ্রহের বিষয়ে শুধু কী তাদের দায়ি করা যায়?সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী তাদের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারবেন?আমরা মনে করি,শিক্ষার্থীদের বেশি আগ্রহ হওয়ার কথা।কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে।আমরা তাদের সবচেয়ে বেশি সচেতন বলে জানি।অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে তারাই আন্দোলন,সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।তাদেরও জীবনের প্রতি মায়া আছে।বিশেষ করে তাদের পিতা-মাতা সন্তানকে এই ভয়াবহ করোনা থেকে রক্ষা করার জন্য টিকা দিতে অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করবেন।তাছাড়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়,তাদের অনেকে রেজিঃ করার পর দীর্ঘদিনেও এসএমএস পায়নি।

সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপেক্ষায়।একটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছিল প্রথমদিকে। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোগ ও সমন্বয়ের বড়ই অভাব ছিল। তাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার কারণেই সঠিক সময়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আজো টিকার বাইরে রয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকায় পিছিয়ে থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারের রোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন,”মনোযোগের অভাব,তাছাড়া এতদিন মূলত পর্যাপ্ত টিকার অভাবেই সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া যায়নি।তবে টিকা নেয়ার চেয়েও জরুরি হলো স্বাস্থ্যবিধি মানা”।

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টিকা প্রাপ্তি কিংবা টিকা প্রদানের সর্বোচ্চ তৎপরতাকে ধন্যবাদ জানাই।তিনি যেভাবে ছাত্রসমাজ তথা জনগণকে টিকা দেয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্নতার মধ্যে ছিলেন এবং আছেন,সে ধরনের তৎপরতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ জড়িত অন্যান্য দপ্তরকে তেমনটি জোরালো দেখা যায়নি।তাদের মধ্যে প্রচন্ড সমন্বয়হীনতা ছিল এবং আজো আছে।তাদের এই গাফিলতির কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার তেমন প্রতিফলন ঘটেনি।এমনকি চলতি জাতিসংঘের অধিবেশনে,হোয়াইট হাউসের সম্মেলনে তিনি টিকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার দিকটি অগ্রাধিকারভাবে দেখছেন। আপনাদের হয়তো মনে আছে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বপ্রথম খোলার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখন সবচেয়ে শেষে খোলা হচ্ছে। বলা হয়েছিল, অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়েছিল অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী বললেন,২৭ সেপ্টেম্বরের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া যেতে পারে।তবে তিনি এ বিষয়ে চূড়াম্ত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতেই ছেড়ে দেন।সে মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ সেপ্টেম্বর লাইব্রেরি এবং ৫ অক্টোবরে আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলবে ২৪ সেপ্টেম্বর। এদিন শুধু স্নাতক ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে উঠবে।তবে অন্য সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে ৩ অক্টোবরে।অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এখনও রেজিষ্ট্রেশন এবং টিকা প্রদানের পূর্ণ তথ্য ইউজিসিকে দিতে পারেনি।এখানে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারবেন কী ?

আমরা জানি,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া ভিসি প্রফেসর সাব্বির হল খোলার বিষয়ে যতই আন্তরিক হোক না কেন,৩০ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা পরিষদ সভার পূর্বে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবেননা।তবে এটাও সত্য, নতুন দায়িত্ব নেয়ার কারণে এবং তিনি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হওয়ার সুবাদে আপাতত কোন ঝুঁকি নিতে চাইবেননা। ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতেও সক্ষম হবেননা।শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার চেয়ে তিনি রাজনৈতিক ইশারাকেই প্রাধান্য দেবেন।তারপরেও তিনি রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার কারণে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই,১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার সময় হাজার হাজার অতিথিদের আগমনের সাথে আমাদের রাজশাহীবাসির মান-সন্মান জড়িত। তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব মূলত আমাদের উপরই বর্তায়।আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন,এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই রাজশাহীর অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে।বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামে।তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে যে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে,তাতে করে নগরীর ছোট বড় ব্যবসায়ীদের ৬ মাসের খোরাক হয়ে যায়। এই গৌরবের বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।তাই এইসব অতিথিদের প্রতি রাজশাহীবাসিকে সজাগ থাকতে হবে। যাতে কোন প্রকারেই তারা অসুবিধার মধ্যে না পড়ে।তারা যেন ফিরে গিয়ে বলতে পারে, রাজশাহীর মানুষ অনেক হেল্পফুল।

যেহেতু আগামি ৪,৫ এবং ৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা এবং তা অনুষ্ঠিত হবে ক্যাম্পাসের ভিতরেই,তাই স্বাভাবিকভাবেই পরিচালকের ভূমিকায় থাকতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।হল যদি খোলা যায়, সেটা সবচেয়ে ভাল।আর তা যদি সম্ভব না হয়,তবে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।প্রশাসনসহ সব সরকারি- বেসরকারি মহলের সাথে মত বিমিময়ের মাধ্যমে সুশৃংখলভাবে অতিথিরা যাতে এই কয়দিন থাকতে পারে,তার সার্বিক ব্যবস্থাপনার প্রতি কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।ব্যত্যয় ঘটলে দুর্নামের ভার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা করাটা মোটেই সমীচীন হবেনা। এই হাজার হাজার মানুষ বাইরে থাকলে,স্বাস্থ্যবিধি মানাটা  হলের চেয়েও দুষ্কর হয়ে পড়বে। আর টিকার রেজিষ্ট্রেশন করা,টিকা নেয়া-সেটা বরং হলে থাকলেই দ্রুত এবং সুশৃংখলভাবে হবে। ‘বাইরে থাকলে আগন্তুকদের যা হবার হোক,আমার ঘাড়ে যেন কোনো দোষ না পড়ে’-এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।এই মনোভাব নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সামিল।

আমরা আশা করি,রাজশাহীবাসির প্রিয় “তাপু ভাই” প্রথমেই চমক দেখাবেন।তিনি ‘শ্যাম রাখি,না কুল রাখি’-এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকবেন না। বৃহত্তর স্বার্থে চলতি সেশনের ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় সমস্যা,জটিলতা একান্তই নিজেদের মনে করে রাজশাহীবাসিকে সঙ্গে নিয়ে সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করবেন এবং সফলতার প্রথম সোপান অতিক্রম করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

লেখক: উপ-রেজিস্ট্রার (অব.),
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।