রাবি: ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও পরীক্ষার অনুমতি দিল প্রশাসন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:
ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৫ মে সিন্ডিকেটের ৪৯০তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি ওই শিক্ষার্থী মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হওয়া থেকে তিন একাডেমিক বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীকে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে হবে। পরীক্ষায় বসার অনুমতি পাওয়া মোস্তাকিম বিল্লাহ্ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। সে হিসেবে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে। কিন্তু সম্প্রতি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সের পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন তিনি। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। মোস্তাকিম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মিজানুর রহমান রানা ও খালিদ হাসান বিপ্লবের কমিটিতে পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

মোস্তাকিমের বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোস্তাকিম ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরের বছর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ৫০৪ নম্বর কোর্সের পরীক্ষায় হলে দায়িত্বরত শিক্ষক সুলতান মাহমুদ রানার সঙ্গে ‘বাজে’ আচরণ করায় ৪৮১তম সিন্ডিকেট সভায় মোস্তাকিমকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে পরবর্তী ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে। আর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ওই বছরেই তার ছাত্রত্ব শেষ হয়। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে সে।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য গত ১৫ এপ্রিল মোস্তাকিম বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম করে উপাচার্য বরাবার শাস্তি মওকুফের আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বিষয়টি গত ৫ মে অনুষ্ঠিত ৪৯০তম সিন্ডিকেট সভায় তোলেন। পরে মোস্তাকিমের শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এক্রাম উল্লাহ বলেন, মোস্তাকিম শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছিল। একাডেমিক কমিটির সভায় আলোচনা করে কোন সুপারিশ ছাড়াই প্রশাসনের কাছে আবেদনটি প্রেরণ করি।

মোস্তাকিম সাংবাদিকদের বলেন, আমি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সবগুলো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ভাইভা দেওয়ার পর আমাকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, আামাকে ওই বছরসহ আগামী দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে আমি শাস্তি মওকুফের আবেদন করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানবিক দিক বিবেচনা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমার শাস্তি মওকুফ করেছে।

নাম গোপন রাখার শর্তে এক সিন্ডিকেট সদস্য জানান, যেহেতু তিনটি একাডেমিক বছর পার হয়ে গেছে সেহেতু সে আর পরীক্ষা দিতে পারে না। বিগত সময়ে অনেক শিক্ষার্থীর বেলায়ও এমন হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা দিক বা না দিক তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। রেজিস্ট্রার স্যার ভাল বলতে পারেন।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, ওই ছাত্রের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই শিক্ষার্থী শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছিল। মানবিক দিক বিবেচনা করে তার শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন আগের ঘটনা, কী বিবেচনায় শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে তা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে সম্ভবত মানবিক দিক বিবেচনা করে শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে।’ আরেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও ব্যস্ত পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

স/শা