রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার: পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার পরও নেই পাঠকের উপস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের রিডিং রুমে শিক্ষার্থীদের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। চারশ থেকে পাঁচশ’র মতো আসনের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি আসন ছাড়া অধিকাংশ আসনই ফাঁকা পড়ে থাকে সবসময়।

সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি খোলা থাকলেও গ্রন্থাগারের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও বই পড়ার প্রতি এই অনাগ্রহ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি তৈরিতে ভাটা ফেলছে বলে মনে করছেন সিনিয়র শিক্ষকরা।

গ্রন্থাগারের সূত্র মতে- বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে গ্রন্থাগারে ৩৫ হাজারের অধিক বই ও ৪০ হাজারের মতো বিভিন্ন ধরনের গবেষণাপত্র ও সাময়িকী রয়েছে। গ্রন্থাগারে জার্নাল রুম, পেপার রুম, সাময়িকী ও রেফারেন্স শাখা, সাধারণ ও বিজ্ঞান পাঠকক্ষ মিলিয়ে সাড়ে সাতশো আসন রয়েছে এখানে। এর মধ্যে পেপার রুম ছাড়া কোনো কক্ষেই শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯টি বিভাগ, ৫টি ইনস্টিটিউট মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার, কিন্তু সে তুলনায় গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও রিডিং রুমে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ’র অধিক শিক্ষার্থীর আনাগোনা ছিলো। বর্তমানে প্রতিদিন ষাটজনের মতো শিক্ষার্থী গ্রন্থাগারে নিয়মতি বই পড়েন।

গ্রন্থাগারের রেজিস্ট্রি খাতার হিসাব অনুযায়ী, গত বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে রিডিং রুমে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি গড়ে ৯০জনের মতো। এরপর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উপস্থিতির গড় কিছুটা কমে যায়। গত ৩ই জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ (৭ মার্চ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০জনের মতো শিক্ষার্থী রিডিং রুমে এসেছেন। তবে অনেক শিক্ষার্র্থীই রিডিং রুমের খাতায় নাম রেজিস্ট্রি না করেই রিডিং রুম ব্যবহার করেন। সে হিসাবে উপস্থিতির হার আরও কিছুটা বেশি হবে বলে জানান রেজিস্ট্রি কাজের দায়িত্বে থাকা নীরাঞ্জন সাহা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই হাতের বামপাশে সুবিশাল রিডিং রুম। রিডিং রুমের ভিতরে সাধারণ ও বিজ্ঞান পাঠকক্ষ। পাঠকক্ষ দুটির চারপাশের দেয়াল ঘেঁষে বিভিন্ন শেল্ফে বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। চার-পাঁচশ শিক্ষার্থী বসার মতো জায়গা রয়েছে কক্ষ দুটিতে। বিভিন্ন সময়ে রিডিং রুমে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি নেই। বিভিন্ন আসনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী বই পড়ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ক্লাসে যা পড়ানো হয় তার অনেক কিছুই গ্রন্থাগারের বইয়ে পাওয়া যায় না। তাছাড়া ইন্টারনেটেই এখন অনেক বই পাওয়া যায়। তাই রিডিং রুম ব্যবহারের আগ্রহ কম তাদের।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাই শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রবণতা কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন সিনিয়র শিক্ষকরা। কথা হয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জ্যোৎস্না চট্টপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহিত্য পড়ার ঝোঁক আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। সভ্যতার অগ্রগতির ফলে আজ এই পরিণতি। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সাহিত্যচর্চার যেই বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে সেটাকে আমাদের লোকজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি সাতিহ্যচর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

রাবির ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিই মূলত এজন্য দায়ী। অল্প কয়টি প্রশ্ন পড়লেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাশ করছে। কোনো বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করছে না। শিক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা গেলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।’

গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বইয়ের সংগ্রহ আছে জানিয়ে গ্রন্থাগার প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র শীল সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘গ্রন্থাগারে প্রতিবছর দু’বার করে বই কেনা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নোট ও লেকচার শিটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ক্রমেই তারা বই পাঠ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এতে তাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ হয়ে আসছে এবং তারা সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না।’

স/অ