রাবি উপ-উপাচার্যের ফোনালাপ ফাঁস: ‘কত টাকা দেওয়ার জন্য রেডি আছো?’ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেই ফোনালাপে চৌধুরী মো. জাকারিয়াকে একটি মেয়ের সঙ্গে টাকার বিষয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ৫৫ সেকেন্ডের এই ফোনালাপটি ফাঁস হয়েছে।

ফোনালাপে উপ-উপাচার্য জাকারিয়া মেয়েটিকে সাদিয়া নামে সম্বোধন করেন। সেখানে সাদিয়া কত টাকা দেওয়ার জন্য রেডি আছে বলে জানতে চান উপ-উপাচার্য। তবে কীসের জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে এবং টাকার পরিমাণের ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তার স্বামী নুরুল হুদা ওই বিভাগ থেকেই পড়ালেখা শেষ করেছেন। তিনি ওই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে চাকরি প্রত্যাশী ছিলেন। গত ২০১৮ সালের মার্চে ওই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় এবং নভেম্বরে ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ওই নিয়োগ ভাইভা বোর্ডে সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এ ছাড়া সিনেট সদস্য রুস্তম আলী, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো.জাকারিয়া এবং বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মণ্ডল।

ওই ভাইভা বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার পর উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মেয়ের স্বামী সাইমুন তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডুর মেয়ে নূর নূসরাত সুলতানা এবং রাবির আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী বনশ্রী রানী বিভাগটিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। এদের মধ্যে নুসরাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত এই তিনজনের চেয়ে বেশি সিজিপিএ থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পাননি নুরুল হুদা। নুরুল হুদা রাবির আইন বিভাগ থেকে অনার্সে সিজিপিএ ৩.৬৫ ও মাস্টার্সে ৩.৬০ সিজিপিএ অর্জন করেন। আইন অনুষদে সেরা হওয়ায় ২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকও পান।

পাঠকদের উদ্দেশ্যে ফোনালাপটি হুবহু তুলে ধরা হল- উপ-উপাচার্য: ‘হ্যা সাদিয়া, আমি প্রফেসর জাকারিয়া, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর। ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েটি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম স্যার।’ উপ-উপাচার্য: ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম, আচ্ছা মা, একটা কথা বলতো, আমার খুব শুনতে ইচ্ছা যে, এখানে তোমরা কত টাকা দেওয়ার জন্য রেডি আছো?’ মেয়ে: ‘স্যার সত্যি কথা বলতে’,,,। উপ-উপাচার্য: ‘না না, সত্যি কথাই তো বলবা। উপরে আল্লাহ তায়ালা, নিচে আমি।’ মেয়ে: ‘অবশ্যই, অবশ্যই। স্যার, আপনি যেহেতু তার অবস্থা জানেন, আরেকটা বিষয় এখানে স্যার, সেটা হচ্ছে, আপনি হুদার… মানে, এমনিতে সে কতটা স্ট্রিক্ট…, আপনি বোধহয় এটাও জানেন স্যার, একটু রগচটা ছেলে।’ পরে উপ-উপাচার্য ‘আচ্ছা রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না’ বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে ওই বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহজাহান মণ্ডল বলেন, ‘ওই নিয়োগ ভাইভা অনুষ্ঠিত হওয়ার দুয়েকদিন আগ থেকে রাবির কয়েকজন শিক্ষক ওই নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হতে পারে বলে সজাগ থাকতে বলেছিলেন।’ এর বেশি কিছু জানাতে পারেননি তিনি। এদিকে নুরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলার নেই বলে জানান।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্যের মন্তব্য জানতে মঙ্গলবার দুপুরে ৩৫ বার মুঠোফোনে কল করলেও তার নম্বরটি ব্যস্ত আছে দেখায়। পরে অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘নুরুল হুদা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার ছাত্র জীবনের শুরু থেকে আমি স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দেখভাল করছি। তার লেখাপড়ার চলমান রাখতে তাকে দু’টি স্কলারশীপের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে বিশ্বস্থসূত্রে জানতে পারি হুদা চাকরি পেতে অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছে। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার একটি স্লিপও আমার নজরে আসে। স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে তার এহেন অসাধুকর্ম রোধকল্পে খোঁজ নেয়ার জন্য তার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলাম। কারণ হুদার স্ত্রীর বাড়ি সৈয়দপুরে। হুদার স্ত্রী সেসময় ব্যাংক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকারও করে তবে বিস্তারিত বলতে রাজি হয়নি।’ উপ-উপাচার্য জাকারিয়ার বক্তব্য এডিট করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে ফোনালাপটি ফাঁস হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনা-সমালোনা শুরু হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং উপ-উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।

স/আর