রাবির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অর্জিত হয়নি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য


রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ৬ জুলাই। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরেও কাক্সিক্ষত সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বি^বিদ্যালয়টি।

দীর্ঘ ৭০ বছরে শিক্ষক-শিক্ষাথীর সংখ্যায় কলেবর বাড়লেও নানা সংকটে চলছে বিশ^বিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, গবেষণা ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন দিকে এখনো কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সেশনজট, আবাসন সংকট, মাদক, শিক্ষার্থী নির্যাতন, শিক্ষক সংকট, শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব ও শিক্ষকদের গবেষণায় অনাগ্রহ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের ধীরগতি, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ছাত্রসংগঠনগুলোর হল দখলসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকট ইত্যাদি কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ১১টি। ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং থেকে ক্রমেই ছিটকে যাচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়টি।

বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা, রাজনীতিকীকরণ ও দুর্নীতি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় শাখা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান প্রতিনিয়তই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ অপরিকল্পিত বিভাগ চালু করা এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ। এছাড়াও দেশের একটা বৃহৎ সংখ্যক তরুণ-যুবক বেকার থাকায় প্রত্যেকের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে একটি সরকারি চাকরি। ফলে তারা একাডেমিক পড়াশোনা কিংবা গবেষণা না করে চাকরি কেন্দ্রীক পড়াশোনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে বিশ^বিদ্যালয় তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে রাষ্ট্রের যে লক্ষ্য থাকে সে জায়গায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত যে র‌্যাংকিং সেখানে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। দলীয় রাজনীতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা থেকে আলাদা করলে শিক্ষকেরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। শিক্ষা ও গবেষণায় অধিক মনোযোগী হবে এবং সে সুযোগ অধিক তৈরি হবে। সরকারি হস্তক্ষেপ যত কম থাকবে ততই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ও উচ্চতর গবেষণার জন্য মঙ্গলজনক হবে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, রাজশহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই অঞ্চল তথা পুরো বাংলাদেশের শিক্ষার হার ক্রমেই বেড়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ যেকোন জাতীয় আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ। তবে পূর্বের তুলনায় গবেষণার সংখ্যা বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিত গবেষণায় বাজেট বৃদ্ধি করা এবং রিসার্স পেপার আন্তজার্তিকভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে বিতর্কিত নীতিমালা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সামগ্রিকভাবে আমাদের এই ৭০ বছরে যে লক্ষ্য অর্জনের কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি।

উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, এটা সত্য যে ১৯৫৩ সালে অনেক আশা আকাক্সক্ষা নিয়েই রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা সবারই প্রত্যাশা যে, এই বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ কিংবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এজন্য বিশ^বিদ্যালয়ের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। তবে সার্বিক বিবেচনায় যথেষ্ট উন্নতি হলেও আমরা এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।