রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সভাপতির প্রতি ১১ শিক্ষকের অনাস্থা

রাবি প্রতিনিধি:
সভাপতির কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি না রাখা ও দায়িত্বে অবহেলাসহ সাতটি অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিমা জামানের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিভাগের ১১ জন শিক্ষক।

আজ বুধবার দুপুরে উপাচার্যকে দেয়া লিখিত অভিযোগের সঙ্গে ওই শিক্ষকদের স্বাক্ষর যুক্ত করা হয়।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, অনাস্থা জানানো শিক্ষকরা বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক নাসিমা জামানের দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে বিভাগ পরিচালনায় তাকে সার্বিক সহায়তা করে আসছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তিনি একাডেমিক কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করছেন। নিজের ইচ্ছা অন্য সকল শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। একাডেমিক কমিটির সভায় কোরাম সংকটের আশঙ্কায় প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে ক্রমাগত জরুরী সভা ডাকছেন। তিনি (সভাপতি) নিজ বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট অপপ্রাচার চালাচ্ছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভাগীয় সভাপতির ইঙ্গিতে বিভাগের আরেক শিক্ষক মোছা. রুখসানা বেগম শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ ও মর্যাদাহানিকর কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগের ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ১১ জন বিধি মোতাবেক তলবি সভা আহ্বানের জন্য সভাপতি বরাবর আবেদন করলে তিনি সভা আহ্বান করেন। কিন্তু পরে সম্পূর্ণ বিনা কারণে সভা শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে তা স্থগিত করেন এবং উপ-উপাচার্যের মৌখিক নির্দেশনায় তা করেছেন বলে দাবি করেন। অথচ উপ-উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেন নি বলে দাবি করেন।

এছাড়া সংবিধান অনুযায়ী সরকারি অফিসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নিয়ম থাকলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি তা করেন না বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। লিখিত ওই অভিযোগে শিক্ষকদের দাবি- দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। বিভাগের সকল প্রকার কেনা-কাটা একক সিদ্ধান্তে করেন। এ ছাড়া সভাপতির দায়িত্বগ্রহণের পরও তিনি বেশিরভাগ সময় কর্মস্থলে থাকেন না এবং বিধি মোতাবেক কাউকে দায়িত্বও দিয়ে যান না। ফলে বিভাগের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে চরম বিঘ্ন ঘটে।

অভিযোগ আমলে নিয়ে বিভাগের শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখতে উপাচার্যকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান শিক্ষকরা।

অভিযোগ স্বাক্ষর করা শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. মো. আমিনুর রহমান, ড. এসএম রাজী, ড. কফিল উদ্দিন আহমেদ, ড. মো. রুহুল আমিন, ড. এসএম এক্রাম উল্যাহ, সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাত তাসনীম, মো. তারেক নূর, সহকারী অধ্যাপক মোসা. কামরুন নাহার, ড. একেএম মাহমুদুল হক, ড. মো. সুলতান মাহমুদ, এসএম মোখলেসুর রহমান।

এর আগে গত ৩১ জুলাই সোমবার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোছা. রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেয় ওই ১১ শিক্ষক। ওই দিন বিকেলে অভিযুক্ত মোছা. রুখসানা পারভীনও তার বিরুদ্ধে বিভাগের কিছু শিক্ষক ষড়যন্ত্র করছেন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর পাল্টা অভিযোগ দেন। শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিমা জামান বলেন, ‘অনাস্থা জানিয়ে প্রশাসনকে দেয়া অভিযোগ বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। গত সোমবার যে তলবি সভা আহ্বান করা হয়েছিল, তা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদেরকে আমি জানিয়েছিলাম। তাঁরা আমাকে মৌখিকভাবে সভা স্থগিত করতে বলেছিলেন, এজন্য সভা স্থগিত করেছিলাম।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছিলাম, কিন্তু গত সোমবার ওই বিভাগে ডাকা কোনো সভা স্থগিত করার নির্দেশনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় সভাপতিকে দেয়া হয়নি।’

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে কিছু একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারা লিখিতভাবে প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছে। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

স/অ