রাবি’র নয়া ভিসি : অভিনন্দন জানাবো তখনই …

লেখক। ফাইল ছবি

গোলাম সারওয়ার:

শত শত অভিনন্দন, আশা-আকাঙ্ক্ষা,হতাশার কথা ব্যক্ত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাজশাহীর কৃতি সন্তান হওয়ার সুবাদে,বিশেষ করে অত্রাঞ্চলের আমজনতার অভিনন্দনের মাত্রাটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধিটা এই অর্থে যে, মানুষ নিজের বাড়ি-ঘরের যত্ন যেভাবে নেন, বাড়িটি সুন্দর সুসজ্জিত করার জন্য যেভাবে সচেষ্ট থাকেন; ঠিক তেমনিভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের বাড়ির মত মনে করে সুন্দরভাবে, নিষ্কলুষভাবে পরিচালনার জন্য তিনি ব্রতি হবেন। আমি বলছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভিসির কথা। তাঁর বাড়ি রাজশাহী শহরের কাজিহাটায়। শৈশব, কৈশর,যৌবন তাঁর কেটেছে এই শহরের মাটির সোঁদা গন্ধে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে এই মাটির সাথে তিনি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপুকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। এই খবর মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি রোববার বিকেলে ভিসির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। শত শত তাঁর হিতাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ীরা ফেসবুকে,সশরীরে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানান।পাশাপাশি অনেকেই হতাশা,নিরাশার কথাও ব্যক্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এইসব পোস্ট, কমেন্ট পর্যালোচনা করলেই বুঝা যায়,রাজশাহীবাসি তথা দেশবাসি কীভাবে নয়া ভিসিকে এবং কীভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে চান।

বাংলাদেশ বেতার,রাজশাহীর কর্মকর্তা বিশিষ্ট লেখক হাসান মীর কমেন্টে বলেন,”আশা করবো,আগের ক্ষমতাসীনদের মতো নিন্দার কোন কাঁটা তাঁকে বিদ্ধ করবেনা”। পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (অবঃ) জয়দেব কুমার ভদ্র কমেন্টে বলেছেন,”যে যায় লঙ্কায়,সেই হয় রাবন-প্রবাদটি মিথ্যা হোক”। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিরব প্রতিবাদকারী ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান স্ট্যাটাস দিয়েছেন, “কলুষিত রাজনীতির উর্ধে থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সারাজীবন তিনি শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছেন কীভাবে মাটি খনন করে ভূগর্ভস্থ মূল্যবান খনিজদ্রব্যের সন্ধান করতে হয়-আশা করি তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি খুঁজে বের করবেন এবং তা প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আশা করি, তিনি পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিচালনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করবেন”।বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একজন ফেলো ড: এসএম শফিউজ্জামান এক কমেন্টে বলেন,”ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের স্যারের একজন ছাত্র এবং পরবর্তীতে সহকর্মী হিসেবে তাঁর সাথে দীর্ঘ পথ চলায় মানুষটিকে মনে হয়েছে অত্যন্ত পজিটিভ মাইন্ডের,মন খোলা,সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন একজন স্মার্ট মানুষ “।অবসরপ্রাপ্ত বিসিএস ক্যাডার ফিকসন ইসলাম এক কমেন্টে বলেন,” তাঁকে এটাও অনুরোধ করবো,তিনি যেন তাঁর পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ না করেন”। রাবি অফিসারদের মোস্তফা- কাওসার-চঞ্চল পরিষদ নয়া ভিসির প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে কমেন্টে জানান,”আপনার হাত ধরেই প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হবে দুর্নীতিমুক্ত ও শিক্ষা-গবেষণায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ইনশাআল্লাহ “। নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর টেকন হামিদ সরকার কমেন্ট করে জানান,” আল্লাহ তাঁকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের তৌফিক দান করেন “।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র এবং তরুণ কলাম লেখক ফোরামের সদস্য সজিব মেহেদী বলেন,” রাবির দুর্দিন কাটিয়ে সুদিন ফিরুক।দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য আর একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটুক।একটি গবেষণাধর্মী ও গণতন্ত্রচর্চার পূণ্যভূমি হোক এই বিশ্ববিদ্যালয়।নয়া ভিসির কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক প্রত্যাশা”।খুলনায় বসবাসরত রাবির প্রাক্তন ছাত্র আলমগীর হোসেন তার কমেন্টে বলেন,”আমাদের আশা,গতানুগতিক ধারার বিপরীতে উপাচার্য হিসেবে নিরপেক্ষ ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব পুনরুদ্ধার করবেন”।

“রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার” ফেসবুক পেইজে সদস্য তানভীর হোসেন পোস্টের মাধ্যমে সকলের কাছে প্রশ্ন রাখেন,”নবনিযুক্ত উপাচার্যের নিকট রাবিয়ানদের প্রত্যাশা কী?”- এই প্রশ্নের উত্তরে আরেক সদস্য মুহাম্মদ আল আমিন কমেন্ট করেন,”ভিসি পদটির প্রতি সবার যে তিক্ত নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে,তিনি যেন এই ধারণার দাফন করে ইতিবাচক ধারণার পুনর্গঠন এবং শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাসের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু যেন করেন”।অপর সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন কমেন্ট করেন,”প্রত্যাশা না করাই ভাল,পরে না পাওয়ার কষ্ট পেতে হবে”। পার্থ সারথি নামে আরেক সদস্য তার কমেন্টে জানান, “এই প্লাটফর্মে এসে ৪ বছর পর ভিসি মহোদয়কে নিয়ে গর্বিত একটা পোস্ট দিতে চাই। যদিও স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে এসে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী বান্ধব হওয়াটাই উনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ”। সদস্য শাহাদাত হোসেন বলেন,”এমন হবেন যেন বিদায়ের সময় সবাই শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নেন।বিতর্কিত কিছু করা যাবেনা।গবেষণায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে শীর্ষে দেখতে চাই”।আরএ খান মৃদুল কমেন্ট করেন,”দুর্নীতিমুক্ত ছাত্রবান্ধব প্রশাসন চাই। এবার অন্তত ক্যাম্পাসের তথাকথিত উদ্ভট সৌন্দর্যবর্ধন বাদ দিয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির এসি ঠিক করা হোক,রিডিং রুম বাড়ানো হোক”।

দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে নয়া ভিসি প্রফেসর তাপু উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে অন্যান্য ভিসিরা বরাবর যে ধরনের বক্তব্য দেন,তিনি সেই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।উল্লসিত হওয়ার মত কিংবা আস্থা রাখার মত কোন পরিবর্তনের আভাস এখনো পরিলক্ষিত হয়নি।আমরা দেখেছি,পূর্বের ভিসি প্রফেসর আব্দুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন।এমনকী কারো শুভেচ্ছাও তিনি গ্রহণ করেননি।তিনি জোর গলায় বলেছিলেন,প্রথম মেয়াদের চার বছর ক্ষমতা থাকায় এবং পরবর্তীতে একা চলার সময় আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।আমি সকলকে চিনেছি।আমাকে কেউ হেলাতে পারবেনা।বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি কোন দাগ লাগাতে দিবনা।কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর কর্মকাণ্ড কী ধরনের হয়েছে,তা তিনি বিদায়ের দিনেও উচ্চকিত কন্ঠে জানান দিয়ে গেছেন। তবে তোষামোদকারি চাটুকারের দল,ধান্ধাবাজ,স্বার্থান্ধরা বরাবরের মত এবারো সক্রিয়।এইসব কীটদের অসাধু কার্যক্রমে ভিসিদের বদনাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নয়া ভিসির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।আমরা জানি,ইতোমধ্যেই তোষামোদকারিরা নানা কৌশলে আবির্ভূত হচ্ছে।এদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকা নয়া ভিসির জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ।

এই করোনাকালীন অতিমারির ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় যে ভয়াবহ ধস নেমেছে,তা থেকে উত্তরণের জন্য অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।তাঁর পূর্বসূরিরা প্রতিষ্ঠানের মূল জায়গার প্রতি অবহেলা করে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায়,গবেষণায়,প্রশাসনে, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি তৈরি করে গেছেন।এইসব ঘাটতি পূরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইলে নয়া ভিসিকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।আমরা জানি, বর্তমানে ভিসি নির্বাচনের যে পদ্ধতি,সেই পদ্ধতিকে দাঁড় করাতে যেয়ে যেসব মানুষের সুনজর প্রয়োজন হয়,পরবর্তীতে নির্বাচিত হলে,সেইসব মানুষদের জন্য বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় তদ্বিরকারী ভিসিদের।অনিচ্ছা সত্বেও অনেক কাজ করতে হয়।জানিনা, তারপরেও সন্মানিত শিক্ষকগণ এই পদ বাগিয়ে নিতে কেন যে এত আকৃষ্ট হন!আসলে এটা এখন অনেক লোভনীয় পদ।শেষ পর্যন্ত এই লোভ সম্মানিত পদে অধিষ্ঠিতদের কোথায় নিয়ে যায়,তা তাঁরা নিজেরাও হয়তো টের পাননা।

তবে ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটোকে আশ্রয় করে রক্ষা পেতে চায়,আমরাও তেমনি নয়া ভিসিকে আশ্রয় করে স্বপ্ন দেখতে চাই।তাঁর প্রতি আমাদের অনেক প্রত্যাশা।আমরা ধরেই নিয়েছি,তিনিই পারবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে।তিনিই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যেতে পারবেন একটি সন্মানজনক অবস্থানে। সেজন্য প্রথমেই তাঁকে নজর দিতে হবে শিক্ষাব্যবস্থায়।এই শিক্ষাব্যবস্থার মূল কারিগরি শিক্ষকসমাজ।তাঁদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।তাঁদের সুখ-দুঃখ,সুবিধা-অসুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে হবে।শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি,কামড়াকামড়ি, প্রকট বিভাজন দূর করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।তাঁদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন,তা সবই করতে হবে।বিবেকের স্বাধীনতাকে শিক্ষকসমাজের অনেকেই যে পরিমাণ অপপ্রয়োগ করেছেন,সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা জরুরি।ব্যক্তিস্বার্থ, অপরাজনীতির কাছে নিজেদের পেশার সন্মান যেভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছেন তা মাথায় রেখে অগ্রসর হতে হবে।যেসব শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ-পদবীর জন্য বর্তমানে ভিসির দুয়ারে ধর্ণা দিচ্ছেন;তাদের মধ্যে যারা সৎ,নিষ্ঠাবান এবং যোগ্য তাঁদের নিয়োগ দিতে হবে।কারণ ঐসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভিসিদের সুনাম বহুলাংশে নষ্ট হয়।প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনক্রমেই ‘চাকুরি বিনিয়োগ কেন্দ্র’ করা যাবেনা।শিক্ষা ও গবেষণার চেয়ে বেতন-ভাতাদি বাবদ সিংহভাগ অর্থ ব্যয় হয়।বর্তমানে নয়া ভিসির মাথার উপর ১৩৮ জনের নিয়োগ জগদ্দল পাথরের মত চেপে আছে।দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে।নয়া ভিসির জন্য পদে পদে সবচেয়ে বেশি চাপ থাকবে স্থানীয়দের চাকরির বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। ধারণা করা যায়,এই চাকরির জন্য তাঁকে অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে থাকতে হবে।সেজন্য প্রথম থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

এছাড়া অফিসের শৃংখলার প্রতি নজর দেয়া খুবই প্রয়োজন।কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দায়িত্বশীলতার প্রতি ধারাবাহিকভাবে কঠোর নজরদারি না থাকলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা খুবই মুশকিল হয়ে পড়বে।ক্যাম্পাসে,দপ্তরে বহিরাগতদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ না আনলে ব্যালান্স রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।আমরা লক্ষ্য করেছি,ভিসির দপ্তরে দর্শনার্থীদের দর্শন দিতে গিয়ে ভিসিকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়।অফিসের প্রাত্যহিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজের সমস্যার সৃষ্টি হয়।এ ব্যাপারে নয়া ভিসিকে দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

আমরা জানি,তিনি রাজশাহীবাসির একজন অত্যন্ত আপনজন,একজন প্রিয় মানুষ।তিনি সবার “তাপু ভাই”।সব শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে তিনি বড় মনের মানুষ বলে পরিচিত। মানুষকে আপন করার ক্ষমতা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। নিরহংকার, চলাফেরায় সাদাসিধা, সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি নগরীর বহু সামাজিক,সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সংগঠনের সাথে জড়িত।তাঁর এই সহজগম্যতা একজন কর্তব্যনিষ্ঠ প্রশাসক হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন।

ভিসির নিয়োগপত্রের ২নং ক্রমিকে একটি বাক্য লেখা আছে,” জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো”।বর্তমানে কথাটা কতটা কার্যকর?আদৌ জনস্বার্থ কেউ দ্যাখে?কথাটা তখনই কার্যকর হবে,যখন জনগণের অর্থ দ্বারা পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জনতার আশা আকাংখা মোতাবেক সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।এই সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সেগুলো করার জন্য তিনি যদি সর্বদা সচেষ্ট থাকেন,তখনই তিনি প্রকৃত অর্থে অভিনন্দিত হবেন অর্থাৎ আনন্দের সঙ্গে গৌরবের স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।তাঁকে আমরা এখন শুভাগমন বা স্বাগত অথবা শুভেচ্ছা জানাতে পারি,কিন্তু অভিনন্দন বলতে যা বুঝায়,তা এই মুহূর্তে নয়,পর্যবেক্ষণের পর।

নয়া ভিসির কাছে আমাদের বিশেষভাবে প্রত্যাশা-যারা দলের লাভ, গ্রুপের বিজয়,স্থানীয় হওয়ার সুবাদে নানা হিসাব-নিকাশ করছেন,সেখান থেকে দূরে এসে শিক্ষা ও গবেষণার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিবেন।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, অনেক বদনাম হয়ে গেছে, নিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।আর নয়,আপনার হাত ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় একটা সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছাবে,সুদূরপ্রসারী অ্যাকশন প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ranking-এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্ততঃ এশিয়ার মধ্যে স্থান লাভ করতে পারবে-আমরা গভীরভাবে সেটিই প্রত্যাশা করি এবং এ অবস্থায় পৌঁছালে, তখনই তিনি প্রকৃতভাবে অভিনন্দন পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করবেন।সামনে তাঁর জন্য দু’টি পথ খোলা।একটি ধ্বংসের এবং আরেকটি সৃষ্টির অর্থাৎ সুশাসন,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে আসা।এখন আমাদের দেখার পালা ‘কোন পথে তিনি হাঁটবেন’।

লেখক: উপ-রেজিস্ট্রার (অব:), রাবি/এএইচএস