রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহেদের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়মিত ক্লাস না নেয়া, উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করাসহ নানান অভিযোগ তুলেছেন ওই বিভাগের একাধিক শিক্ষক। এমনকি খোদ সভাপতি পদে তার নিয়োগ অবৈধ বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি, আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশে বিলম্বে সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আবু নাছের মো. ওয়াহিদের গাফিলতির অভিযোগ উঠে। অভিযোগ উঠে সভাপতি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করায় ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের দিন তড়িঘড়ি করে নম্বরপত্র জমা দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, এই ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ যেন ‘কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার’ মত ঘটনা।
বিভাগের দুজন সিনিয়র শিক্ষক সভাপতি পদে তার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে সভাপতি পদে আবু নাসের মো. ওয়াহেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ২ আগস্ট সহযোগী অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহেদকে তিন বছরের জন্য সভাপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ লাভের প্রায় ৭ মাস পর ২০০৯ সালের ১৩ মার্র্চ সভাপতি পদে থেকে তিনি অব্যাহতি নিয়ে শিক্ষা ছুটিতে যান। প্রায় ছয় বছর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য তিনি বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর তিনজন শিক্ষক জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে বিভাগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের তিনি পুনরায় বিভাগে যোগদান করেন। এরপর তিনি সভাপতি পদে অবশিষ্ট মেয়াদে দায়িত্ব পালনের জন্য তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. মিজানউদ্দিনের কাছে আবেদন জানান। তিনি সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেয়া ও বিভাগের আরো দু’জন সিনিয়র শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও বিশ^বিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য তাকে সভাপতি পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালের আইন অনুসারে, কোন সভাপতি পদত্যাগ করলে বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলে তিনি পরবর্তীতে আর সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। উপাচার্য জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে বিভাগের সভাপতি নিয়োগ দিবেন। তবে শিক্ষা ছুটিতে গেলে তিনি অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কিন্তু, তিনি সভাপতির পদ থেকেই অব্যাহতি নিয়েছেন। ফলে এ ক্ষেত্রে উভয় আইনের লঙ্ঘন ঘটেছে।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুস সোবহান সিল্কসিটি নিজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে কোন শিক্ষক সভাপতি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর এক বছরের কম সময় দায়িত্ব পালন করে শিক্ষা ছুটিতে গেলে তিন বছরের মধ্যে ফিরে আসলে ও বিভাগের আর কোন সিনিয়র শিক্ষক না থাকলে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভাগের বিভিন্ন দায়িত্ব অন্য শিক্ষকদের না দিয়ে সভাপতি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের হাতে নিয়েছেন। বিভাগের সভাপতির পাশাপাশি তিনি আইন অনুষদেরও ডিন। ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের দায়িত্ব বৃদ্ধি করায় তিনি ক্লাস নেয়া, পরীক্ষা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন না বলে বিভাগের শিক্ষকরা জানান। বিভাগের ‘মুট কোর্ট’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে যার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন অন্য এক শিক্ষক। সম্প্রতি ওই শিক্ষককে বাদ দিয়ে তিনি ওই সংগঠণের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন। বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের সার্বিক তত্ত্ববধানের জন্য একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সভাপতি বিভাগের অন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব না দিয়ে নিজেই সান্ধ্য কোর্সের তত্ত্ববধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
তার নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুস সোবহান আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে তাহলে তার নিয়োগটি প্রশ্নবিদ্ধ। এক্ষেত্রে কেউ আইনের দারস্থ হলে সে আইনগত প্রতিকার পেতে পারে।’
তবে এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স/অ