রাবিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী’ প্রো-ভিসি নিয়োগের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী’ উপ-উপাচার্য নিয়োগের প্রতিবাদে এবং দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বুধবার (১৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’র ব্যানারে রাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও অন্যরা এই কর্মসূচি পালন করেন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম টিপু। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব নূর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এরপর তাঁর নিয়োগের খবর ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক এর সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ক্যাম্পাসের সাবেক শিক্ষার্থীসহ এর আশেপাশের লোকজন।

মানববন্ধনোত্তর সমাবেশে এসময় বক্তারা বলেন, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম টিপুর বড় ভাই প্রয়াত অধ্যাপক ড. সোলাইমান আলী সরকার ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। তার নির্দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের নিরীহ মানুষদেরকে ধরে নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে পাক হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করত। তার মানে হচ্ছে, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সুলতান-উল-ইসলাম টিপুর বড় ভাই অধ্যাপক ড. সোলায়মান আলী সরকার পাক-হানাদার বাহিনীর দোসর ছিলেন। তারা আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ‘বিতর্কিত’ লোককে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হলো।

বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্থায়নে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিফলক নির্মাণের দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমানাসহ দুর্নীতির মাধ্যমে ৯০০ কেজি তামা গায়েবের অভিযোগ রয়েছে নব-নিযুক্ত উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে। ‘বিতর্কিত’ একজন শিক্ষককে এই পদে নিয়োগ দেয়ায় প্রগতিশীল শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ ক্ষমতাসীন জোট সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষুব্ধ।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ড. সুলতান-উল-ইসলাম টিপুর অনেক আত্মীয়-স্বজন বিএনপি-জামাতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অথচ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বসিয়ে মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হলো। আন্দোলনকারীরা অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম টিপুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেন। সেই সাথে তাকে উপ-উপাচার্যের চেয়ারে বসতে দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন তারা। এসময় আন্দোলনকারীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের জোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মু. আতিকুর রহমান সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনোত্তর সমাবেশে বক্তব্য দেন- রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমান মর্তুজা, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এসকে আরকান বাপ্পী প্রমুখ। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ১/১১ এর সময় কারাবরণকারী আজিম বিন কামাল উজ্জ্বল, সাবেক সহ-সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন ডিলস, মহানগর যুবলীগ এর সদস্য নাসির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এএইচ/এস