রাবিতে বাজেট পাসের ৫ বছর পরও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ, ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা

গোলাম রববিল, রাবি:

অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মিত হচ্ছে ২০তলা একাডেমিক ভবনসহ দুটি আবাসিক হল। প্রকল্পের এক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কচ্ছপগতিতে চলছে ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ। দ্বিতীয় দফায়ও কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ প্রকল্প পরিচালক। এদিকে এই ভবনগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সামনের রাস্তা বেহাল দশা ও ধুলোবালিতে নাজেহাল শিক্ষার্থীসহ রাস্তার আশপাশের রেস্তোরা ও মুদি দোকানিরা। কবে এই নির্মাণ কাজ শেষ হবে প্রশ্ন তুলে  ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাব, অদক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনবল দিয়ে কাজ করানোর ফলে কাজে ধীরগতি চলছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল দপ্তরের ব্যর্থতায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক হলের সামনের রাস্তায় দীর্ঘদিন চলাচলের কারণে রাস্তায় ধুলাবালি এবং বৃষ্টিতে তা কর্দমাক্ত হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোকলেসুর রহমান বলেন, দিনরাত কাজ করার জন্য রাস্তায় ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু প্রথম বর্ষ থেকেই হলের নির্মাণকাজ দেখে আসছি কিন্তু শেষ হচ্ছে না। এতে করে গরমকালে ধুলোবালি ও বৃষ্টিতে কাদায় অতিষ্ঠ হয়ে জীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পের জন্য পাস হয় ৩৬৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, ১০ তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরবর্তীতে এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালে বাজেট সংশোধিত হয়ে ৫১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট শহীদ কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও ২০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স’। ১০ তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা বিল্ডার্স’। এই কাজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। এখন পর্যন্ত নিচ তলার ফ্লোর ঢালাইয়ের কাজও সম্পন্ন হয়নি। শেখ হাসিনা হল নির্মাণের কাজও চলছে ধীরগতিতে। দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র ১ তলা ভবন। অন্যদিকে এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ১০ তলা বিশিষ্ট এ ভবনটির নির্মাণ কাজের ৬ তলা দৃশ্যমান হয়েছে। এদিকে এই ভবনগুলোর নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে ক্যাম্পাসের শহীদ শামসুজ্জোহা, সোহরাওয়ার্দী, মাদারবখস, জিয়াউ ও হবিবুর রহমান হলের সামনের রাস্তায় দিনরাত চলছে মালবাহী গাড়ি।

শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজের দেখভাল করছেন প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এই ভবন। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজের ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগস্টের মধ্যে টোটাল স্ট্রাকচার সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। এপ্রিল থেকে গাথুনী শুরু হবে।

২০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের সাইড ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল হাসান বলেন, এতো বিশাল একটা বিল্ডিংয়ের আসল কাজ ছিল ফাউন্ডেশন করা। সেই মূল কাজটাই শেষ হয়ে গেছে। কাজ থেমে নেই। বাকি ওপরের কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। তবে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

কামরুজ্জামান হল নির্মাণের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, আমাদের প্রজেক্টের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে মোট ব্যয় অনুযায়ী আমাদের নির্মাণ কাজের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সাত তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাজ শেষ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহীদ কামারুজ্জামান হল নির্মাণ কাজের ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে ২০তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের নিচ তলার ঢালাইয়ের কাজ চলছে।

তার দাবি, এই প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। আগামী ৭-৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। ১০ তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল নির্মাণ কাজের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে দু’তলা ভবন।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের ২২ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। এক দফা বাড়ানো মেয়াদ শেষ হবে এই বছরের ২৩ ডিসেম্বরে। প্রকল্পের মেয়াদ এক দফা শেষ হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি কারণ ২০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের পাইলিংয়ের কাজ ছিল জটিল। কিন্তু পাইলিং করতেই লেগেছে দেড় বছর। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি না হলে এবং সব কিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে দায়িত্বরত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে কাজ হয়েছে তার থেকে বেশি অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু কারণে কাজের বিলম্ব হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল মারা যাওয়ার পরে প্রায় দুই মাস কাজ বন্ধ ছিল। তাছাড়া নির্মাণাধীন ভবনে একজন শ্রমিকের মৃত্যু ও ভারী গাড়ি চলাচলে সমস্যা হওয়ায় কাজ চালিয়ে যেতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।