‘রাবিতে অ্যাডহকে দেয়া নিয়োগ বাস্তবায়ন না হলে আমরা প্রশাসন ভবনে একযোগে আত্মহত্যা করব’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ১৪১ জনকে অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাস্তবায়ন করা না হলে একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে  গিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিবিরের হামলায় পঙ্গুত্ববরণকারী ও নির্যাতনের শিকার (অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শনিবার (০৮ মে)বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আব্দুস সালামের দপ্তরে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তারা এমন হুশিয়ারি দেন।

এর আগে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির তিন সদস্য রাবি ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত করেন।প্রশাসন ভবনের উপাচার্য দপ্তরে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহানসহ এই অ্যাডহকে প্রদান করা নিয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন এই তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এই নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেন।

স্থগিতাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত নিয়োগপত্রের যোগদান এবং তদসংশ্লিষ্ট সকল ধরনের কার্যক্রম রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি রাবিতে তাদের  তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলে যাওয়ার পর অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিকালে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাত করতে যান। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রেজিস্ট্রারের জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে অ্যাডহকে নিয়োগ প্রদান করা ১৪১ জনকে চাকরিতে যোগদানের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান।তখন রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম- সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে গিয়ে কিছুই করতে পারবেন না বলে জানালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিবিরের নির্মম হামলায় পা হারানো ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রেজিস্ট্রারকে বলেন, ‘শিবিরের হামলায় আমি পা হারিয়েছি। বাম হাত দিয়েই কিছুই করতে পারি না। মাথায়ও প্রচণ্ড জখমের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া পুরো শরীরে শিবিরের ক্যাডাররা কুপিয়ে জখম-রক্তাক্ত করেছিল।বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চাকরি ছাড়া আমার অন্য কোনো কিছু করে জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়।মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আব্দুস সোবহান পিতার ভূমিকায় আমাদেরকে অ্যাডহকে চাকরি প্রদান করেছেন্।যেহেতু ১৯৭৩ এর অ্যাক্ট মোতাবেক তিনি তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে অ্যাডহকে নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা রাখেন। তাই স্যার, দয়াকরে আমাদের প্রতি একটু সদয় হন।আমাদের অ্যাডহকে চাকরিতে যোগদানের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেন। যদি আমরা চাকরিতে যোগদান করতে না পারি তাহলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমি এই প্রশাসন ভবনেই আত্মহত্যা করব।’

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ও শিবিরের নির্মম হামলায় আহত আতিকুর রহমান সুমন বলেন, ‘এই রেজিস্ট্রারই বিএনপি-জামায়াতের সময় ৫৪৪ জনের নিয়োগে স্বাক্ষর করেছেন। অথচ এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আমরা নির্যাতিত-নিপীড়িত ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ আওয়ামী পরিবারের   ১৪১ জন অ্যাডহকে নিয়োগ পেয়েছি।শেষ পর্যন্ত যদি আমাদেরকে যোগদান করতে দেয়া না হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে প্রশাসন ভবনে এসে আত্মহত্যার পথটিই বেছে নিব।’

এসময় উপস্থিত অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতাদের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘তোমরা আমরা সন্তানতূল্য।তোমরা ক্যাম্পাসে শিবিরের সঙ্গে লড়তে গিয়ে যেমন রক্ত ঝড়িয়েছো, আমিও দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে রক্ত ঝড়িয়েছি। তাই যদি সুযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, শুধু মাসুদ কিংবা আতিকই নন; ছাত্রলীগের অনেক নেতাই যারা অ্যাডহকে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই ত্যাগী এবং প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন শিবিরের হাতে বিভিন্ন সময় হামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।আবার ছাত্রলীগের এমন ত্যাগী নেতাও রয়েছেন যাদের বয়স ৪০ অতিক্রম হয়ে গেছে।অথচ এখনও বেকার জীবনের অভিশাপের ঘানি টানতে দিয়ে বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেননি।

এএইচ/এস