রাণীনগরে শতাধিক খাসপুকুর প্রভাবশালীদের দখলে

রাণীনগর প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে জনস্বার্থের অজুহাতে মামলা দিয়ে সরকারিভাবে ইজারা বন্ধ করে শতাধিক খাস পুকুর দখল করেছে প্রভাবশালীরা। ফলে দীর্ঘদিন মামলার বেড়াজালে ইজারা বন্ধ থাকায় অসাধু চক্রটি লাভবান হলেও প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এদিকে উপজেলা সহকারী (ভূমি) কমিশনার বলছেন, ইতোমধ্যে মামলাকৃত পুকুরগুলো চিহ্নিত করে ইজারার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পুকুর এক বছরের জন্য খাস আদায়ে ইজারা দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সবগুলো পুকুরই খাস আদায়ে ইজারার আওতায় আনা হবে।

রাণীনগর উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলায় প্রায় ৫৮৪টি খাস পুকুর রয়েছে। এসব পুকুর প্রতি তিন বছর পর পর সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী একটি স্বার্থান্বেষী মহল ইজারা বন্ধ করতে জনস্বার্থের নামে আদালতে মামলা দিয়ে ইজারা বন্ধ করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসছে। এছাড়া অনেকেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি দাবি করে আদালতে মামলা দিয়ে ইজারা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারিভাবে ইজারা বন্ধ করতে পুকুরগুলো জনস্বার্থে মামলা দিয়ে ইজারা বন্ধ করলেও পুকুর চাষ ও ভোগ দখল করছেন একটি প্রভাবশালী মহল। ইজারা না দিয়ে পুকুর উন্মুক্ত রেখে জনগনের স্বাধীনভাবে পানি ব্যবহার, ফসল ফলাতে জমিতে পানি সেচ, গরু-ছাগল, মহিষকে গোসল করানোসহ নানা কারণে জনস্বার্থে আদালতে মামলা দেয়া হয়েছে।

ভূমি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় মোট ৫৮৪টি পুকুরের মধ্যে ১০২টি পুকুরে মামলা রয়েছে। মামলাকৃত পুকুরের মধ্যে অধিকাংশই জনস্বার্থের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকেই ব্যক্তি মালিকানা দাবিদার হয়ে আদালতে মামলা দিয়ে ইজারা বন্ধ করে দিয়েছেন।

উপজেলার করজগ্রামের বাসিন্দা প্রতুল চন্দ্র ও অরুন চনদ্র নামে দু’জন ব্যক্তি ওই এলাকার করজগ্রাম মৌজার মোট ৮.৭১ একর ৫টি পুকুর, বোঁহার গ্রামের লোকমান সরদার, বোঁহার মৌজায় ২.৫৬ একর একটি পুকুর, ছাতার দিঘী গ্রামের সবুজ আলী, ছাতার দিঘী মৌজার ১.৫৪ একর একটি পুকুরে আদালতে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেন। এরপর পুকুর উন্মুক্ত রাখতে সরকারিভাবে ইজারার উপর আদালত থেকে নিষেধাঙ্গা জারি করে ইজারা বন্ধ করে দেন। তবে পুকুরে জনগণের স্বার্থে মামলা দিয়ে ইজারা বন্ধ করা হলেও জনগণই এর কোন সুফল ভোগ করতে পারছেন না। যেখানে পুকুরগুলো ইজারা না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার কথা, সেখানে মামলার বাদীরায় বনে যান পুকুর মালিক। তিনিই মাছ চাষ থেকে শুরু করে পুকুরটি রক্ষণাবেক্ষণ ও ভোগ দখল করে থাকেন। এছাড়া অনেক স্থানে এসব পুকুর মসজিদের পক্ষ থেকে অথবা মন্দির কিংবা শ্মশানের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে ইজারা দিয়ে ইজারার টাকা ওই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কিছু লোক বা প্রতিষ্ঠান অনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে এ উপজেলা থেকে সরকার পুকুর ইজারা থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

মামলার বাদী করজগ্রামের অরুন চন্দ্র জানান, পুকুরগুলো করজগ্রাম হিন্দু-মসলিম মিলেই মসজিদ এবং মন্দিরের পক্ষ থেকে শহিদুল ইসলাম শহিদ ও রঘুনাথ নামের দু’জনের নিকট ইজারা দেয়া হয়েছে। বোহার গ্রামের লোকমান সরদার জানান, পুকুরটি গ্রামের মসজিদের পক্ষ থেকে চাষ করা হচ্ছে। ছাতার দীঘি গ্রামের সবুজ আলী বলেন, পুকুরটি মসজিদ কমিটি ইজারা দিয়ছেন। ইজারাকৃত টাকাগুলো মসজিদের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) টুকটুক তালুকদার বলেন, ইতোমধ্যে মামলাকৃত পুকুরগুলো চিহ্নিত করে ইজারার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পুকুর এক বছরের জন্য খাস আদায়ে ইজারা দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সবগুলো পুকুরই খাস আদায়ে ইজারার আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা জলমহল কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, যেগুলো পুকুর ইজারাযোগ্য, সেগুলো পুকুর টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক পুকুর খাস আদায়ের জন্য দেওয়া আছে বলে জানান তিনি।

 

স/শা