রাণীনগরে লক্ষীপূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগরে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার কুজাইল বাজারে ছোট যমুনা নদীর তীরে সোমবার থেকে শুরু হয় গ্রামীণ এ মেলা। হাজারো হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে। মেলার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ছিল ‘বউ মেলা’। বুধবার পর্যন্ত চলবে এ মেলা। প্রতি বছরের মত এবারও স্থানীয়দের উদ্দ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজা শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ীর রাজত্ব পরিচালনার আগে থেকে লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রায় দুইশ’ বছর থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে এ মেলা শুরু হয়।

মেলার প্রথম দিন সোমবার বিশেষ আর্কষণ লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর। এদিন দুপুরের পর থেকে রাণীনগর উপজেলা, আত্রাই, মহাদেবপুর, নওগাঁ সদরসহ কয়েকটি উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে নৌকায় চড়ে আসতে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকায় সাউন্ড বক্স, মাইক আর ঢাকের তালে নৃত্যে মুখরিত হয়ে উঠে নদী। এরপর নৌবহর শেষে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। মেলার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।

আয়োজকরা জানান, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এখানে প্রতি বছর নৌবহর ও গ্রামীণ মেলা হয়েই থাকে। তাই শত বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়।

কুজাইল গ্রামের বিকাশ চন্দ্র বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব হলেও আমাদের এখানে লক্ষ্মীপূজার আনন্দটাই বেশি হয়। লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে এটা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটা মেলা। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আগমনে যেন মূখরিত হয়ে উঠে। সোমবার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নদীতে নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে বিশাল নৌবহর শুরু হয়। পাশাপাশি থাকে আনন্দ উপভোগ করার নৌকাও। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গ্রামের মেলা দেখা শুরু হয়।

মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে শত শত নৌকা ছোট যমুনা নদীতে নৌবহর শুরু করে। নৌবহর দেখতে নদীর দু’পাড়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর পাশাপাশি  স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।

এস/আই