রাণীনগরে মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মহিলা (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত বৃস্পতিবার (৩১ মার্চ) কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো এ অভিযোগের  প্রেক্ষিতে কলেজের অধ্যক্ষ ও হিসাব রক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে পত্র প্রাপ্তির সাত কর্যদিবসের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হল- কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতীত সাময়িক বরখাস্তকৃত এক প্রভাষকের মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ, সভাপতির অনুমোদন ব্যতিত এডহক কমিটির প্রস্তাব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করাসহ নানান আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি, দুই প্রভাষকের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা ও কলেজের আদায়ী অর্থ আত্মসাত। এ  অভিযোগে অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।  এছাড়া অধ্যক্ষকে এসব দুর্নীতির সহযোগীতা করেছেন বলেও কলেজের হিসাব রক্ষক সুমন কুমার ঘোষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

নোটিশ সূত্রে জানা যায়, রাণীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতীত সাময়িক বরখাস্তকৃত এক প্রভাষকের মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সভাপতির জনুমোদন ব্যতীত এডহক কমিটির প্রস্তাব জাতীয় বিশ্ববিগ্যালয়ে প্রেরণ করেছেন ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে অধ্যক্ষের জবাব দাখিলে সতর্ক করে ক্ষমা প্রদর্শন পূর্বক সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর আবারও কলেজের প্রভাষক হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সুজিত চন্দ্র সাহা ও প্রভাষক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সনজীব কুমার সাহার বেতন ভাতার কাগজপত্র গ্রহণ পূর্বক দীর্ঘদিন যাবৎ তা এমপিও ভুক্তির জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ না করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। এছাড়াও তাদের নিকট থেকে প্রথমে ১০ লাক্ষ টাকা ঘুষ (উৎকচ) গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে আবার ৬ লাক্ষ টাকা প্রদানের জন্য বার বার মৌখিকভাবে চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও যার জবাব এখনো দেওয়া হয়নি।

আরও জানা যায়, অধ্যক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩১ মার্চ কলেজের সভাপতিসহ উপজেলা কৃষি অফিসার কলেজের সংশ্লিষ্ঠ রেজিষ্টারপত্র যাচাইকালে জানতে পারে যে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে অদ্যতক কলেজের আদায়ী রেজিষ্টার অনুয়ারী মোট আদায়ী অর্থের পরিমাণ ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫২ টাকা। তার মধ্যে অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে রাণীনগর সোনালী ব্যাংক টিটিডিসি শাখা হিসাব নম্বরে ৪ লাক্ষ ১৮ হাজার ৪৫০ টাকা এবং সোনালী বাংক শাখায় হিসাব নম্বরে ৩ লাক্ষ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ৭ লাক্ষ ৬৫ হাজার ৯৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। অবশিষ্ট ৬ লাক্ষ ৮২ হাজার ২ টাকা কলেজের হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে অধ্যক্ষ নিজে আত্মসাৎ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান বলে লিখিতভাবে নোটিশে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাণীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি এখনো কারণ দর্শানোর নোটিশ পাইনি। নোটিশ পাওয়ার পর আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো। আর যে সকল অভিযোগ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি।

কলেজের হিসাব রক্ষক সুমন কুমার ঘোষ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পন্ন মনগড়া।

রাণীনগর মহিলা কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে অধ্যক্ষকে বার বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। তারপরও তিনি এসব দুর্নীতি থেকে সরে আসছেন না। গত বৃহস্পতিবার কলেজে গিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আর এসব দুর্নীতিতে অধ্যক্ষকে সহযোগিতা করে আসছেন কলেজের হিসাব রক্ষক। তাই গত ৩১ মার্চ অধ্যক্ষসহ হিসাব রক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জি/আর