রাণীনগরে ভাইরাস ছড়িয়ে পরার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নারায়নগঞ্জসহ শহর ফেরতরা

রাণীনগর প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় নারায়নগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য বিধি না মেনে অবাধ চলা ফেরা করছে। ফলে রাণীনগর উপজেলা জুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার উদ্বেগ বাড়ছে। এসব শহর ফেরতদের এখনই হোম কোয়ারেন্টিনে ফেরাতে না পারলে পরিস্থীতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসি।এদিকে গোবিন্দগঞ্জের গাইবান্দা থেকে আসা চার জনের মধ্যে দুই জনের নমুনা দ্বিতীয় বারের মতো সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এখনো কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার লোকজন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, সাভার সিলেট, চিগটাগংসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন শহরে কেউ গার্মেন্টস, কেউ এনজিওসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশায় কর্মরত রয়েছেন। দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার পর অফিস আদালত, গার্মেন্টস, এনজিও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া করোনা ভাইরাস রোধে একের পর এক নারায়নগঞ্জসহ অধিকাংশ জেলা শহর লক ডাউন করা হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমন রোধে ইতি মধ্যে নওগাঁ জেলাকেও লকডাউন ঘোষনা করেছেন জেলা প্রসাশন। এর পরেও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে স্বাস্থ্য বিধি ভঙ্গ করে হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে অবাধ চলা ফেরা করছেন। উপজেলার ভেটি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় ১০-১২ জন নারায়নগঞ্জ থেকে এসে অবাধ চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার ভোরে মাইক্রো যোগে ঢাকা থেকে আবাদপুকুর স্ট্যান্ডে বেশ কয়েকজন নেমেছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া চকারপুকুর, বিষঘড়িয়া, ক্ষুদ্রবেল ঘড়িয়া, ভেবরা, রাতোয়াল, অলংকারদীঘি, গুয়াতা, হরিশপুর, বেতগাড়ীসহ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রাম-পাড়ায় শহর ফেরত লোকজন এসেছেন। তাদের অনেকেই নিয়ম মেনে চললেও অধিকাংশ লোকজনই স্বাস্থ্য বিধির নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে চলাচল করছেন। এছাড়া প্রতিদিন আধা বেলা হরতালের মতো সকালে প্রায় অধিকাংশ বাজারে লোকজনের ভির দেখা গেলেও বিকেলেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার উদ্বেগ বাড়ছে এমনটায় মনে করছেন এলাকাবাসি।
এদিকে গত সপ্তাহে গোবিন্দগঞ্জের গাইবান্দা থেকে লকডাউন অতিক্রম করে পালিয়ে চার জন নারী পুরুষ রাতে আবাদপুকুর এসে ওঠে। খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখেন। এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ওই দিনই এসে চার জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। এর পর গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বারের মতো নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মিরা। এর আগে অলংকার দিঘী গ্রামের যুবক  (২২) প্রচন্ড জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে গ্রামবাসি তাকে গ্রামে ওঠতে দেয়নি। তিনটি হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পাওয়ায় ওই দিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় বলে জানিছেনে আল আমিনের বাবা মকলেছুর রহমান। পরে মেনিনজাইটিস রোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এএইচএম ইফতে খারুল আলম খাঁন বলেন, আবাদপুকুরে অবস্থানকারী গাইবান্দা থেকে আসা চার জনের মধ্যে দুইজনের নতুন করে দ্বিতীয় বারের মতো করোনা ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এপর্যন্ত রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। বাকিগুলোর রির্পোট এখনো আসেনি। এছাড়া নারায়নগঞ্জ বা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসাদের ঘরে থাকতে কাউন্সিলিং করছি তার পরেও কেউ নিয়ম মানছেনা।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, যেহেতেু লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে সেহেতু এমনিতেই ঘরের বাহিরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। তার পরেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি শহর ফেরতদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য। নিয়ম না মানলে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।