রাণীনগরে বোরো আবাদে খরচ বেশি, উৎকন্ঠায় কৃষক

রাণীনগর প্রতিনিধি: 
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আবাদে খরচ বৃদ্ধিতে উৎকন্ঠায় পড়েছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে এবার ধান চাষিদের। কৃষকরা বলছেন, ডিজেল তেল, বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে বর্গা ও জমি পত্তন নেওয়া চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। এবার জিরাশাইল, কাটারি, ব্রিধান-৯০, ৯২, ১০০, ১০২ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে।
বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। বোরো ধান ক্ষেতে সবুজের সমারোহ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নজর কাড়ছে বোরো ক্ষেত। কৃষকের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে তাদের রোপণ করা ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তোলার। তবে বিদ্যুৎ, ডিজেল তেল, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎকন্ঠায় দিন কাটছে তাদের।
ঝিনা গ্রামের কৃষক গোবিন্দ চন্দ্র বলেন, এবার বন্ধক রাখা জমির পাশাপাশি শুধুমাত্র ইরি-বোরো আবাদের জন্য এক বিঘা জমি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে পত্তন নিয়ে আবাদ করেছি। জমিটি গভীর নলকূপের আওতায়। তাই জমিতে পানি সেচ বাবদ নলকূপ কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়েছে ২ হাজার টাকা। এছাড়া ওই জমিতে হাল-চাষ, লাগানো, নিরানি, সার, কীটনাশকসহ ধান কাটা-মাড়াই করে ঘরে তুলতে এক বিঘায় প্রায় ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরব পরবে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, জমি চাষ, লাগানো, নিরানিসহ বিভিন্ন কাজে গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি বিঘায় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক বিঘায় ধান পাবো ২২ থেকে ২৫ মণ। কাটা-মাড়াইয়ের সময় প্রতি মণ ধান ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় বিক্রি না হলে লোকসান গুণতে হবে।
খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক হাসিম খান বলেন, এ মৌসুমে প্রায় ২২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমি নিজের ও বন্দক নেওয়া। আর বাঁকি ৫ বিঘা জমি বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা করে এ মৌসুমের জন্য পত্তন নিয়ে আবাদ করেছি। তিনি বলছেন, নিজের জমিতে এবার লাভ হবে। কিন্তু সার ও কীটনাশক, জমি চাষ, লাগানো, নিরানিসহ বিভিন্ন কাজে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পত্তন নেওয়া জমিতে লোকসান হতে পারে।
বর্গা চাষি হামিদ বলেন, এবার ৩ বিঘা জমি বর্গা (আদি) নিয়ে বোরো ধান রোপণ করেছি। গত বছর থেকে এ বছর বোরো ধান চাষে খরচ দ্বিগুন বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবার বর্গা প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান পাবো আনুমানিক ২২ থেকে ২৫ মণ। এরমধ্যে জমির মালিককে বিঘাতে ৭ থেকে ৮ মণ করে ধান দিতে হবে। তাহলে ধান চাষ করে কি লাভ হবে। এবার ধান কাটার সময়ই প্রতি মণ ধান ১৫শ’ টাকার উপরে বিক্রি করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ধান উৎপাদনে কৃষকদের এবছর খরচ একটু বেড়েছে। ইতি মধ্যে মাঠে মাঠে ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ২৭ মন করে ধান পাবে। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে ধানের দাম বেশ ভালো আছে। কৃষকরা বোরো ধান বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশা করছি।