রাণীনগরে গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণে নয় ছয়ের অভিযোগ

রাণীনগর প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের টুনি পুকুর, হরিতলা ও কুলাগাড়ী পুকুর পাড়ে নির্মিত গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘর তৈরির কাজে নয় ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ঘর তৈরি করা হলেও করা হয়নি ঘরের মেঝে। ঘরের মেঝে তৈরী না করায় ভূমিহীনরা অধিকাংশ ঘরে উঠতে পারছেন না।

এদিকে গুচ্ছগ্রামের উদ্বোধন ও ঘর হস্তান্তর না করায় এ নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন উঠেছে। অনিয়মগুলো দ্রুত ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের চামটা গ্রামের পাশের্^ টুনিপুকুর, হরিতলা ও কুলাগাড়ী পুকুর পাড়ে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে প্রতি ঘরে বরাদ্দ দেওয়া হয় দেড় লাখ টাকা করে। সেই গুচ্ছগ্রামে তৈরি করা হয়েছে ৭০ টি ঘর। গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণের কাজের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচীব পিআইও। ঘর নির্মাণের কাজ কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলো নির্মাণের দায়িত্ব নেন।

এদিকে ওই স্থানে ঘর নির্মাণ করতে বাধা দিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার কারণে গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারেনি ঘর তৈরিকারীরা বলে জানা গেছে। তারপরও নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর ঘর তৈরির কাজ শেষ এবং টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে।

এদিকে গুচ্ছগ্রামে নির্মিত ৭০টি ঘরের মধ্যে প্রায় ৪০-৫০টি ঘর যারমত তাই দখল করে বসবাস শুরু করছেন। এখনো ২০টি ঘরের মেঝেতে মাটি কেটে দিয়েছেন ঘর তৈরিকারীরা। আর বাঁকি সব ঘরের মেঝেতে মাটি কেটে দেওয়া হয়নি এবং তৈরি করে দেওয়া হয়নি ঘরের মেঝে। এছাড়া যারমত তাই ঘরের মেঝেতে নিজেরাই মাটি কেটে গুচ্ছগ্রামের ঘরে ঢুকেছেন। অনেক ঘরের নীচে ফাঁকা থাকায় কেউ বসবাস করতে পারেন না। সেই ঘরের মধ্যে আগাছা জন্মে শিয়ার, সাপ, পোকা-মাকড় বসবাস করে। এমন ঘটনা ঘটলেও দেখেও দেখন না উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এছাড়াতো গুচ্ছগ্রামের ঘর হস্তান্তর বা উদ্বোধনের কোন খেঁাঁজ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি ঘর তৈরিতে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ঘর তৈরির কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী টিন, লোহার রড়, নিম্নমানের সিমেন্টের পিলার দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়। এছাড়াও টয়লেট নির্মাণেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করা হয়েছে। ফলে অনেক ঘরের টিন, লোহাতে এখনি জাং ধরে গেছে। ঘর নির্মান করা হলেও মাটিও কেটে দেওয়া হয়নি ঘরের মেঝেতে। এছাড়া প্রতিটি ঘরের সাথে বন্ধু চুলা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি চুলা। গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে ঘরের কাজে নয় ছয় করার অভিযোগ উঠেছে ঘর তৈরিকারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। দ্রুত ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত জামাল হোসেন, আছিয়া বিবি, নারগিস, ফাইমা, বুলিসহ আরো অনেকেই সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের জায়গা জমি নেই তাই আমরা এখানকার ঘরে বসবাস করছি। আমরা যখন ঘরে উঠেছি তখন আমরা ঘরের মেঝেতে দেড় ফিট থেকে ২ফিট উঁচু করে মাটি কেটে ঘরে ঢুকেছি। মাটি কাটতে তাদের ঘর প্রতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। তারা আরো বলেন, ১৫-২০টি ঘরের মেঝেতে মাটি কেটে দিয়েছে পিআইও। আর সব ঘরের মেঝেতে মাটিও কেটে দেওয়া হয়নি। তৈরি করে দেওয়া হয়নি ঘরের মেঝে। এখনি ঘরের মেঝের দিকের টিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বন্ধু চুলা দেওয়ার কথা আমরা শুনেছি। কিন্তুু দেওয়া হয়নি চুলা। কর্মকর্তারা ঘর তৈরি করে রেখে চলে গেছেন। যেভাবে ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে এতে করে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফু জানান, ওই গ্রামে সরকারি খাস জমিতে ১শ’ ৩০ ঘর নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তি দক্ষিণের অংশে ঘর নিমার্ণ করতে দেবেন না বলে উচ্চ আদালতে মামলা করায় ৬০ ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে উত্তর অংশে ৭০টি ঘর নির্মাণে কিভাবে, কত টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রকল্পে কাকে কাকে রাখা হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাকে জানানো হয়নি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান বলেন, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে কোন অনিয়ম করা হয়নি। কাজের সিডিউল অনুযায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে। আর চুলা ঘরে লোকজন উঠার পর দেওয়া হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সভাপতি ও রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আল মামুন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ঘর তৈরী করা হয়েছে। গুচ্ছগ্রামের ঘর হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তারপরও অনিয়মের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে জানিয়েছেন তিনি।

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পূণবাসন কর্মকর্তা কামরুল আহসান জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।