রাণীনগরে এক ইউনিয়নে দুই নিকাহ রেজিস্ট্রার; দিধাদ্বন্দে জনগণ

রাণীনগর প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নে সরকারি নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) দাবিদার দুইজন ব্যক্তি। কে ভুয়া, কে সঠিক এমন দিধাদ্বন্দে ভূগছে ওই ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। আর এদের খপ্পরে পরে প্রতিনিয়ন প্রতারিত হচ্ছে নব দম্পতী ও তাদের পরিবার। এই দুইজন কাজী নিজেকে সরকারি কাজী বলে দাবি করে এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি কাজী দাবিদার কেউবা বাল্য বিবাহ দেওয়াসহ অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আর দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় এমন ঘটনা ঘটতে থাকলেও এসব বিষয়ে তাকিয়েও দেখেন না প্রশাসনের কর্তারা। তাই দ্রুত এসব বিষয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ২ নং কাশিমপুর ইউনিয়নে ২০০২ সালে মোজাফ্ফর হোসেনকে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই সরকারি কাজী হিসাবে মোজাফ্ফর হোসেন ওই ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমত অবস্থায় হটাৎ করে কাজী মোজাফ্ফর হোসেনকে কোন কিছু না জানিয়ে তাকে ২০১১ সালের ২৮ ফ্রেরুয়ারী ১৫৫ নং স্বারকে তার নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স বাতিল করেন কর্তৃপক্ষ। এর সুযোগে তৎকালীন স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় কয়েক মাসের মাথায় মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলার গহেলাপুর গ্রামের বেলাল হোসাইন নামে এক ব্যক্তি কাশিপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। এরপর বিষয়টি জানতে পেরে কাজী মোজাফ্ফর হোসেন তার লাইসেন্স বহাল রাখার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নম্বর- ১০২৩৯/২০১১। কাজী মোজাফ্ফরের মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৩ আগষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক মোজাফ্ফরের নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স বাতিল আদেশটি ১৫৫ নং স্বারক স্থগিদ করেন এবং একই আদেশে বেলাল হোসাইনের নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্সটিও স্থগিদ করেন।

এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার বেলালকে নিকাহ রেজিস্ট্রারের সকল কর্যক্রম বন্ধের আদেশ দেন। কিন্তু বোলাল হোসাইন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এবং কাউকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি হটাৎ করে মোজাফ্ফরের উচ্চ আদালতে দায়ের করা মামলায় বেলাল হোসাইন তার পক্ষে রায় পেয়েছেন মর্মে এলাকায় প্রচারণা চালায়। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর কাজী মোজাফ্ফর হোসেনকে ভূয়া কাজী আখ্যায়িত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সরকারি কাজী দাবিদার বেলাল। ইউএনও অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার কামরুজ্জামানকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর সহকারী প্রোগ্রামার উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই বাচাই অন্তে কাজী বেলালের দাখিলকৃত হাইকোর্টের খারিজ মামলার ওয়েব রিপোর্টে মামলার বিস্তারিত কোন তথ্য না পাওয়ায়, আগের তথ্য মোতাবেক বেলাল কাজীর নিকাহ রেজিস্ট্রার আপাতত স্থগিদ আছে এবং মোজাফ্ফর হোসেনের নিকাহ রেজিস্ট্রার বহাল আছেন। তাই হাইকোর্টের চুড়ান্ত কপি না আসা পর্যন্ত মোজাফ্ফর হোসেন মূল কাজী হিসাবে কাশিমপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করতে পারেন মর্মে ইউএনও বরাবর ১৮ আগষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন সহকারী প্রোগ্রামার কামরুজ্জামান।

কাশিমপুর ইউনিয়নের সরকারি নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী দাবিদার মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আমি নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বেশ ভালো ভাবেই রেজিস্ট্রী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলাম। হটাৎ করে আমাকে কিছু না জানিয়েই মন্ত্রণালয় আমার নিয়োগ বাতিল করেন। এরপর তৎকালীন সময়ের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় বেলাল ওই ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন। পরে আমি উচ্চ আদালতে মামলা করলে আদালত ২০১২ সালের ১৩ আগষ্ট আমার বাতিলকৃত লাইসেন্স স্থগিদ করেন এবং একই আদেশে বেলালের লাইসেন্স স্থগিদ করেন। এরপরেও বেলাল অবৈধভাবে এলাকায় রেজিস্ট্রী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আবার এলাকায় নানান ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে তিনি আমার দায়ের করা মামলায় রায় পেয়েছে। যদি বেলাল মামলায় রায় পেয়ে থাকে তাহলে আমি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো সেই পক্রিয়া চলামান আছে বলেও জানান তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর ইউনিয়নের সরকারি নিকাহ রেজিষ্টার কাজী দাবিদার বেলাল হোসাইন বলেন, কাশিমপুর ইউনিয়নের কাজী মোজাফ্ফরের নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে ২০১১ সালে কাশিমপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। সেই থেকেই আমি নিয়োগের বলে রেজিষ্ট্রী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমার লাইসেন্স স্থগিদের কোন আদেশ আমি পাইনি। আমাকেসহ সরকার পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মোজাফ্ফর আদালতে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন পর সেই মামলাতে আমার পক্ষে রায় এসেছে তাই আমি এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমি রায়ের কপি হাতে পাবো বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বেলালের দায়ের করা অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার কামরুজ্জামান অভিযোগটির তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলেও এবিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের অফিসের তথ্য মতে কাশিমপুর ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রারে বেলালের নাম নেই। কাজী মোজাফ্ফর হোসেন ওই ইউনিয়নের কাজী সেটি অফিসের তালিকায় আছে। জানা মতে আদালতে মামলা চলমান আছে। ইতি মধ্যেই লোকমুখে জানতে পেরেছি মামলার নাকি রায় হয়েছে। কার পক্ষে রায় হয়েছে সেটিও জানা যায়নি। আর আমার কাছে এখনো কোন রায়ের কপি আসেনি। রায়ের কপি দেখলে বলতে পারবো কে ওই ইউনিয়নের সঠিক কাজী।