রাজস্ব ফাঁকিবাজদের ধরবে এনবিআরের তিন গোয়েন্দা শাখা

করোনাকালীন সংকটে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দীর্ঘদিনের রাজস্ব ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের বকেয়া আদায়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য এনবিআরের তিন গোয়েন্দা শাখা—কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একাধিক টিম কাজ করছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মইনুল খান। দায়িত্ব গ্রহণের পর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তিনি দীর্ঘদিনের ভ্যাট ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছেন। গত সোমবার থেকে ভ্যাট গোয়েন্দাদের একাধিক দল বিনা নোটিশে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়ে ওই প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে। প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিশোধের তথ্যও যাচাই করা হবে। সম্প্রতি এনবিআর থেকে অনলাইনে গ্রহণ করা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে প্রদর্শিত স্থানে রাখতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশ না মানলেও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহি করবেন ভ্যাট গোয়েন্দারা।

এ ব্যাপারে ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান  বলেন, ‘এটা গোপন কোনো বিষয় না যে করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য চরম খারাপ যাচ্ছে। আয় না থাকলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কিভাবে ভ্যাট দেবেন—এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য সরকার রাজস্ব না পেলে কিভাবে চলবে?’

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বন্ড দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুনভাবে এ অভিযান শুরু করা হবে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার শওকত হোসেন বলেন, ‘রাজস্ব ফাঁকিবাজদের ছাড় নেই। বন্ড দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে বড় অঙ্কের পাওনা রাজস্ব আদায় করা হবে।’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে পারলে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন আদালতে অনিষ্পত্তি হওয়া রাজস্ব মামলাগুলো বিকল্প বিরোধ আইনের আওতায় এনে নিষ্পত্তি করতে পারলেও রাজস্ব আদায় হবে।’

সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রাজস্ব মামলার সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৭২টি। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে রাজস্ব খাতে সরকারের আদায় হওয়ার কথা ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। বছরের পর বছর এসব মামলা অমীমাংসিত থাকায় সরকারের তহবিলে একটি টাকাও জমা হচ্ছে না। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনে জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আদায় কমেছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বা ৪ শতাংশের মতো।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘করোনার কারণে গত মার্চ থেকে রাজস্ব আদায়ে বাজে অবস্থা তৈরি হয়। এর মধ্যে দুই মাস দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল ছিল।’

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ