নৌকা ফেলে ঈগলের পেছনে নেতাকর্মীরা

রাজশাহী-৫ আসন: স্বতন্ত্রই দারার বিষফোঁড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর রাজশাহীর ৬টি আসনের এমপি প্রার্থীরা প্রচারণায় আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। থেমে নেই রাজশাহী-৫ আসনের এমপি প্রার্থীরাও। প্রতিক বারাদ্দের পর প্রথম দিকে প্রার্থীদের মধ্যে কিছুটা নিষ্ক্রিয়ভাব দেখা গেলে বর্তমান মনোনিত প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ গরম করে রেখেছেন। এই আসনে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থীর চেয়ে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়েই বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

আর এই আসনেও আওয়ামী লীগ মনোনিত বনাম আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে। তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই আসনে নৌকার বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীসহ ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজি আব্দুল ওয়াদুদ দারা, জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান (ঈগল), জাতীয় পার্টি থেকে আবুল হোসেন (নাঙ্গল), গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মখলেসুর রহমান (মাছ), বিএনএম মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম (নোঙ্গর) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আলতাফ হোসেন মোল্লা (একতারা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
রাজশাহীর-৫ আসনে বর্তমান এমপি মনসুর রহমান ছিটকে গিয়ে দলীয় মনোনয়ন পান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়দুদ দারা। গত ২০০৮ সাল ও ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়নে এমপি হন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি বেশ কিছু কারণে এ আসন থেকে ছিটকে যান। এ আসনে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন ডা. মনসুর রহমান। পুনরায় এবার দারা আসনটি পেয়েছেন।

এদিকে, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে খুব বেশি লবিং-গ্রুবিং ছিল না। এমন কি দলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। প্রথম দিকে দলের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমানও নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানও সতেজ হয়ে উঠেছেন। বলাই যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ আসনের প্রবীণ রাজনীবিদ থেকে শুরু করে নবীনরাও নৌকা ছেড়ে এখন ঈগলের ডানায় উঠে দাঁড়িয়েছেন।

দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, দারা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ভেদাভেদ ভুলে প্রাবীন নেতাকর্মীরা যান তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। কিন্তু সাক্ষাত করতে যাওয়া অনেক নেতাদের বর্তমান এমপি পন্থীসহ বিভিন্ন পন্থী আখ্যা দিয়ে দারা অপমানের ভাষায় কথা বলেছেন। দারার লোকজন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের উপর হামলা, মারপিট করে রীতিমত আলোচনায় আসেন। এতে এই দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের প্রবীন ও ত্যাগি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিকল্প পন্থা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই উপজেলার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের পক্ষ নিয়েছেন। এতে এই আসনে নৌকার বিজয় অনেকটাই অনিশ্চিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের সাথে যোগ দিয়েছেন জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র পদস্থ নেতাকর্মীরা। এছাড়াও দুই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ১৮জন চেয়ারম্যানের মধ্যে অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। কেউ আছেন প্রকাশ্যে আবার কেউ বা গোপনে।
এব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহিম কনক বলেন, যেহুত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় আমার স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছি। কারণ নেতাকর্মীরা যার কাছে মূল্যায়ন পাবে সেখানেই যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
দুর্গাপুর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার দলের বাইরে যাইনি মন্তব্য করে বলেন, সাবেক এমপি দারা মনোনয়ন পেয়েছেন এটাই অনেক। তার ভোটের দরকার নাই। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দলের লোকজনদের মারপিট, নির্যাতন চালাচ্ছেন। এখনি যদি এই অবস্থা হয় তাহলে পরে কি হতে পারে। যার কারণে পৌর যুবলীগের সকল নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। তবে এ আসনটিতে নৌকা জয়ী হতে হলে প্রেক্ষপট পরিবর্তন করতে হবে।